পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৬
ছিন্নমুকুল

 “বাঁধা দিয়েছি”।

 “বাঁধা দিয়েছ? আর এই সব নিরীহ চাকরদের উপর জুলুম দেখেও তুমি এতক্ষণ চুপ করে ছিলে? কি ভয়ানক! তোমার অত টাকার দরকার কিসের? বাঁধা দিয়েছ কেন?”

 “আমি মনে করেছিলুম দু-একদিনের মধ্যেই বালাটা খালাস করব।”

 কিন্তু তোমার অত টাকার দরকার কি? তুমি যে মাসকাবারি পাও তাইত তোমার খরচের জন্য যথেষ্ট।”

 কনক ইহার কি উত্তর দিবে? মিথ্যা কথা বলা তাহার অভ্যাস নাই,—নহিলে একবার চেষ্টাও করিতে পারিত।—সে কেবল নীরবে অশ্রুপাত করিতে লাগিল। সুশীলা কুদ্ধ হইয়া আবার বার বার প্রশ্ন করিলেন,—“অত টাকা কি করলে—উত্তর দাও।”

 এই সময় কনকের দাসী আসিয়া উপস্থিত হইল, সে সাড়ী বিক্রয়ের চেষ্টায় বাহিরে গিয়াছিল। আসিয়া এই ব্যাপার দেখিয়া প্রথমে ভীত তাহার পর কনকের দুর্দ্দশায় কাতর হইয়া পড়িল। কনকের প্রতি এইরূপ পীড়ন দেখিয়া বলিয়া ফেলিল, “তা ওকি আর টাকা খেয়ে ফেলেছে! দাদাবাবু চেয়ে পাঠিয়েছে—তাই দিয়েছে—তুমি ত আর চাইলে দেবে না,—ও না দিলে কে দেয়?”

 সুশীলা রাগিয়া বলিলেন—“প্রমোদ চেয়ে পাঠিয়েছে! অত টাকা সে কখনো চাইবে না,—সেত আর বওয়াটে ছেলে নয়। দাঁড়াও আমি জিজ্ঞাসা করছি।”

 দাদার নাম করায় কনক ক্রুদ্ধ কটাক্ষে দাসীর দিকে চাহিল; দাসী বুঝিল—একথা বলিয়া ভাল করে নাই—সে কথাটা সারিয়া লইবার অভিপ্রায়ে বলিল—‘তা সব টাকা দাদা বাবুকে দিয়েছে তা বলছিনে, দিদিমণির কি খরচ নেই! কত দানধ্যান করছে—যে যখন টাকা চাচ্ছে তাকে দিচ্ছে।’