পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঊনবিংশ পরিচ্ছেদ
৯১

করিয়া বিবাহ করিতে গেলে যে কেবলমাত্র তাঁহার ধনক্ষতি হয় তাহা নহে, নীরজার ভালবাসা, নীরজার ভক্তিশ্রদ্ধাও তাহা হইলে হারাইতে হয়। যামিনী ভিতরে যাহাই হউন না কেন, বাহিরে লোকের নিকট সাধু সচ্চরিত্র বলিয়া পরিচিত হইবার আকাঙ্ক্ষা রাখিতেন। তিনি অত্যন্ত প্রশংসা-প্রিয় ছিলেন, নিন্দা সহ্য করিতে পারিতেন না। এমন কি, প্রশংসার জন্য তিনি লাভের অংশও কিছু পরিমাণে ত্যাগ করিতে কুণ্ঠিত হইতেন না। নীরজা তাঁহাকে ভাললোক জানিয়া অতিশয় ভক্তি করিত, এখন বলপূর্ব্বক বিবাহ করিলে ধনক্ষতিও হইবে সঙ্গে সঙ্গে নীরজার ভক্তিও হারাইবেন। একেবারে এতটা ক্ষতি স্বীকার করিতে যামিনীনাথ প্রস্তুত ছিলেন না। ভাবিলেন আর কিছু দিনে যদি সকল দিকে সুবিধা হয়,—যদি ধনলাভও হয় এবং বালিকা আপনা হইতেই বিবাহ করে—তো অল্প দিন ধৈর্য্য ধরাই ভাল।

 কিন্তু বিবাহ স্থগিত রাখিয়াছেন বলিয়া এখন তাঁহার অনুতাপ হইতে লাগিল। কেন না ভাগ্য সহসা তাঁহার প্রতি সুপ্রসন্ন। অনেক দিন ধরিয়া আর তাঁহাকে জ্যেঠাইমার মৃত্যুকামনাজনিত পাপ সঞ্চয় করিতে হইল না। সম্প্রতি তিনি কালাশৌচ হইতে মুক্তিলাভ করিয়া সমস্ত বাধার অবসানে যখন নীরজাকে বিবাহ করিবেন এই আশায় সম্পূর্ণ আশ্বস্ত হইয়া উঠিয়াছেন তখনই সে আশায় তাঁহাকে নিরাশ হইতে হইল। আশাহত ঈর্ষাদগ্ধ ‘মরিয়া’র মত তিনি এই গৃহে আসিয়া উচ্চৈঃস্বরে একজন দ্বারবানকে ডাকিতে লাগিলেন। দ্বারবান আসিয়া যামিনীর আজ্ঞা শুনিয়া চলিয়া যাইবার কিছুক্ষণ পরে অন্য একজন লোক গৃহ-মধ্যে প্রবেশ করিল। যামিনীনাথ অনেকক্ষণ ধরিয়া তাহার সহিত কথা কহিতে লাগিলেন, কথা সমাপ্তে সে ব্যক্তি বলিল—

 “কসুর মাপ করবেন, এ কাজ এ অধীন হতে হবে না!” যামিনীনাথের বঙ্কিম নাসাগ্রভাগ রক্তিম বর্ণ হইল, কুটিল ভ্রূযুগল কুঞ্চিত