সমান সারে ব’সে বকশিশ দিচ্ছে ছুঁড়ে, উঠোনসুদ্ধ লোকের সামনে তাকে কিনা এমন অপমান! ঘুম যখন ভাঙল দেখি মায়ের তক্তপোষে শুয়ে আছি। বেলা হয়েছে বিস্তর, ঝাঁ ঝাঁ করছে রোদ্দুর। সূর্য উঠে গেছে অথচ আমি উঠি নি, এ ঘটে নি আর-কোনো দিন।
শহরে আজকাল আমোদ চলে নদীর স্রোতের মতো। মাঝে মাঝে তার ফাঁক নেই। রোজই যেখানে-সেখানে যখন-তখন সিনেমা, যে খুশি ঢুকে পড়ছে সামান্য খরচে। সে কালে যাত্রাগান ছিল যেন শুকনো গাঙে কোশ দু-কোশ অন্তর বালি খুঁড়ে জল তোলা। ঘণ্টা কয়েক তার মেয়াদ, পথের লোক হঠাৎ এসে পড়ে, আঁজলা ভ’রে তেষ্টা নেয় মিটিয়ে।
আগেকার কালটা ছিল যেন রাজপুত্তুর। মাঝে মাঝে পালপার্বণে যখন মর্জি হ’ত আপন এলেকায় করত দান-খয়রাত। এখনকার কাল সদাগরের পুত্তুর, হরেক রকমের ঝক্ঝকে মাল সাজিয়ে বসেছে সদর রাস্তার চৌমাথায়— বড়ো রাস্তা থেকে খদ্দের আসে, ছোটো রাস্তা থেকেও।
৬
চাকরদের বড়োকর্তা ব্রজেশ্বর। ছোটোকর্তা যে ছিল তার নাম শ্যাম— বাড়ি যশোরে, খাঁটি পাড়াগেঁয়ে, ভাষা তার কলকাতায়ি নয়। সে বলত— তেনারা, ওনারা, খাতি হবে, যাতি হবে, মুগির ডাল, কুলির আম্বল। ‘দোমনি’ ছিল তার আদরের ডাক। রঙ ছিল শ্যামবর্ণ, বড়ো বড়ো চোখ, তেল-চুক্চুকে লম্বা চুল, মজবুত দোহারা শরীর। তার স্বভাবে কড়া কিছুই ছিল না, মন ছিল সাদা। ছেলেদের ’পরে