চোখের সামনে নাচাইত ছায়া। প্রদীপের নিষ্কম্প শিখাটি তাহাকে আলাে দিত, ভরসা দিত না।
এই আশঙ্কা ও দুর্ভাবনার ভাগ শ্যামা কাহাকেও দিত না।
ভাগ লইবার কেহ ছিলও না। এক ছিল শীতল, আঁতুড়ের ধারেকাছেও সে ভিড়িত না। ষষ্ঠীপূজার রাত্রে সে কেবল একবার নেশার আবেশে কি মনে করিয়া আঁতুড়ে ঢুকিয়াছিল। ছেলের শিয়রের কাছে ধপাস করিয়া বসিয়া পড়িয়াছিল এবং অকারণে হাসিয়াছিল।
শ্যামা বলিয়াছিল তুমি কি গাে? বিছানা ছুঁয়ে দিলে?
শীতল বলিয়াছিল, খােকাকে একটু কোলে নিই। বলিয়া ছেলের বগলের নিচে হাত দিয়া তুলিতে গিয়াছিল। শ্যামা ঝটকা দিয়া তাহার হাত সরাইয়া দিয়া বলিয়াছিল কি কর? ঘাড় ভেঙ্গে যাবে যে।
ঘাড় শক্ত হয়নি।
নাকে গন্ধ লাগায় এতক্ষণে শ্যামা টের পাইয়াছিল।
গিলেছ বুঝি? তুমি যাও বাবু, এখন থেকে যাও।
নেশা করিলে শীতলের মেজাজ জল হইয়া করুণ রসে মন থমথম করে। সে ছলছল চোখে বলিয়াছিল, আর করব না শ্যামা। যদি করি তাে খােকার মাথা খাই।
শ্যামা বলিয়াছিল, কথার কি ছিরি। যাও না বাবু এখান থেকে।
শীতল বড্ড দমিয়া গিয়াছিল। যেন কাঁদিয়াই ফেলিবে। খানিক পরে শ্যামার বালিশটাকে শােনাইয়া বলিয়াছিল, একবার কোলে নেব না বুঝি।
শ্যামা বলিয়াছিল, কোলে নেবে তাে আসনপিঁড়ি হয়ে বােসো। তুলবার চেষ্টা করলে কিন্তু ভাল হবে না বলে দিচ্ছি।
শীতল আসনপিঁড়ি হইয়া বসিলে শ্যামা সন্তর্পণে ছেলেকে তাহার কোলে শােয়াইয়া দিছিল। লােকে যেভাবে অচল দুযানি দ্যাখে ঝুঁকিয়া তেমনিভাবে ছেলের মুখ দেখিয়া শীতল বলিয়াছিল, যমজ নাকি এ্যাঁ?
নেশার সময় মাঝে মাঝে শীতলের চোখের সামনে একটা জিনিস দুটো হইয়া যাইত।
শুধু সেই একদিন। ছেলে কোলে করার সাধ শীতলের আর কখনাে