পাতা:জাপান-যাত্রী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জাপান-যাত্রী

বসেও আছি, চল্‌চিও। সেই জন্যে চলার কাজ হচ্চে, অথচ চলার কাজে মনকে লাগাতে হচ্চে না। তাই মন, যা সামনে দেখচে তাকে পূর্ণ করে দেখ্‌চে। জল স্থল আকাশের সমস্তকে এক করে মিলিয়ে দেখ্‌তে পাচ্চে।

 ভেসে চলার মধ্যে দিয়ে দেখার আর একটা গুণ হচ্চে এই যে, তা মনোযোগকে জাগ্রত করে, কিন্তু মনোযোগকে বদ্ধ করে না। না দেখতে পেলেও চল্‌ত, কোনো অসুবিধে হত না, পথ ভুল্‌তুম না, গর্ত্তয় পড়তুম না। এই জন্যে ভেসে চলার দেখাটা হচ্চে নিতান্তই দায়িত্ববিহীন দেখা,― দেখাটাই তার চরম লক্ষ্য― এই জন্যেই এই দেখাটা এমন বৃহৎ, এমন আনন্দময়।

 এতদিনে এইটুকু বোঝা গেছে যে, মানুষ নিজের দাসত্ব করতে বাধ্য, কিন্তু নিজের সম্বন্ধেও দায়ে-পড়া কাজে তার প্রীতি নেই। যখন চলাটাকেই লক্ষ্য করে পায়চারি করি, তখন সেটা বেশ; কিন্তু যখন কোথাও পৌঁছবার দিকে লক্ষ্য করে চল্‌তে হয়, তখন সেই চলার বাধ্যতা থেকে মুক্তি পাওয়ার শক্তিতেই মানুষের সম্পদ প্রকাশ পায়। ধন জিনিষটার মানেই এই― তাতে মানুষের প্রয়োজন কমায় না কিন্তু নিজের প্রয়োজন সম্বন্ধে তার নিজের বাধ্যতা কমিয়ে দেয়। খাওয়া পরা, দেওয়া নেওয়ার দরকার তাকে মেটাতেই হয়, কিন্তু তার বাইরে যেখানে তার উদ্বৃত্ত সেইখানেই মানুষ মুক্ত, সেইখানেই সে বিশুদ্ধ নিজের পরিচয় পায়। এই জন্যেই ঘটিবাটি প্রভৃতি দরকারী জিনিষকেও মানুষ সুন্দর করে’ গড়ে’ তুলতে চায়—