পাতা:জাপান-যাত্রী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জাপান-যাত্রী
৯৯

গগনের। অসীম যেখানে সীমার মধ্যে, সেখানে ছবি; অসীম যেখানে সীমাহীনতায়, সেখানে গান। রূপরাজ্যের কলা ছবি অপরূপ রাজ্যের কলা গান। কবিতা উভচর, ছবির মধ্যেও চলে, গানের মধ্যেও ওড়ে। কেননা কবিতার উপকরণ হচ্ছে ভাষা। ভাষার একটা দিকে অর্থ, আর একটা দিকে সুর; এই অর্থের যোগে ছবি গড়ে ওঠে, সুরের যোগে গান।

 জাপানী রূপরাজ্যের সমস্ত দখল করেচে। যা কিছু চোখে পড়ে, তার কোথাও জাপানীর আলস্য নেই, অনাদর নেই; তার সর্ব্বত্রই সে একেবারে পরিপূর্ণতার সাধন করেচে। অন্য দেশে গুণী এবং রসিকের মধ্যেই রূপ-রসের যে বোধ দেখতে পাওয়া যায়, এ দেশে সমস্ত জাতের মধ্যে তাই চড়িয়ে পড়েচে। য়ুরোপে সর্ব্বজনীন বিদ্যাশিক্ষা আছে, সর্ব্বজনীন সৈনিকতার চর্চ্চাও সেখানে অনেক জায়গায় প্রচলিত,―কিন্তু এমনতর সর্ব্বজনীন রসবোধের সাধনা পৃথিবীর আর কোথাও নেই। এখানে দেশের সমস্ত লোক সুন্দরের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে।

 তাতে কি এরা বিলাসী হয়েচে? অকর্ম্মণ্য হয়েচে? জীবনের কঠিন সমস্যা ভেদ কর্‌তে এরা কি উদাসীন কিম্বা অক্ষম হয়েছে?—ঠিক তার উল্টো। এরা এই সৌন্দর্য্যসাধনা থেকেই মিতাচার শিখেচে; এই সৌন্দর্যসাধনা থেকেই এরা বীর্য্য এবং কর্ম্মনৈপুণ্য লাভ করেচে। আমাদের দেশে একদল লোক আছে, তারা মনে করে শুষ্কতাই বুঝি পৌরুষ। এবং