পাতা:জাপান-যাত্রী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪০
জাপান-যাত্রী

 যেদিক থেকে ঐ মনোহরণ অন্ধকারের বাঁশি বাজ্‌চে, ঐ দিকেই মানুষের সমস্ত আরাধনা, সমস্ত কাব্য, সমস্ত শিল্পকলা, সমস্ত বীরত্ব, সমস্ত আত্মত্যাগ মুখ ফিরিয়ে আছে; ঐ দিকে চেয়েই মানুষ রাজ্যসুখ জলাঞ্জলি দিয়ে বিরাগী হয়ে বেরিয়ে গেছে, মরণকে মাথায় করে নিয়েচে। ঐ কালোকে, দেখে মানুষ ভুলেচে। ঐ কালোর বাঁশিতেই মানুষকে উত্তর মেরু দক্ষিণ মেরুতে টানে, অণুবীক্ষণ দূরবীক্ষণের রাস্তা বেয়ে মানুষের মন দুর্গমের পথে ঘুরে বেড়ায়, বারবার মরতে মরতে সমুদ্র-পারের পথ বের করে, বারবার মরতে মরতে আকাশ-পারের ডানা মেল্‌তে থাকে।

 মানুষের মধ্যে যে-সব মহাজাতি কুলত্যাগিনী, তারাই এগচ্চে, ―ভয়ের ভিতর থেকে অভয়ে, বিপদের ভিতর দিয়ে সম্পদে। যারা সর্ব্বনাশা কালের বাঁশি শুন্‌তে পেলে না, তারা কেবল পুঁথির নজির জড় করে কুল আঁকড়ে বসে রইল ―তারা কেবল শাসন মান্‌তেই আছে। তারা কেন বৃথা এই আনন্দলোকে জন্মেছে, যেখানে সীম কাটিয়ে অসীমের সঙ্গে নিত্য লীলাই হচ্চে জীবনযাত্রা, যেখানে বিধানকে ভাসিয়ে দিতে থাকাই হচ্চে বিধি।

 আবার উল্টোদিক থেকে দেখ্‌লে দেখ্‌তে পাই, ঐ কালো অনন্ত আস্‌চেন তাঁর আপনার শুভ্র জ্যোতির্ম্ময়ী আনন্দমূর্তির দিকে। অসীমের সাধনা এই সুন্দরীর জন্যে, সেই জন্যেই তাঁর বাশি বিরাট অন্ধকারের ভিতর দিয়ে এমন ব্যাকুল হয়ে