পাতা:জীবন-স্মৃতি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৩৪৮).pdf/১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জীবন-স্মৃতি

সেই দ্রুত-উচ্চারিত অনর্গল শব্দটা এবং ছন্দের দোলা। শিশুকালের সাহিত্যরসভাগের এই দুটো স্মৃতি এখনো জাগিয়া আছে—আর মনে পড়ে, “বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদেয় এল বান।” ঐ ছড়াটা যেন শৈশবের মেঘদূত।

 তাহার পরে যে-কথাটা মনে পড়িতেছে, তাহা ইস্কুলে যাওয়ার সূচনা। একদিন দেখিলাম দাদা এবং আমার বয়ােজ্যেষ্ঠ ভাগিনেয় সত্য, ইস্কুলে গেলেন, কিন্তু আমি ইস্কুলে যাইবার যােগ্য বলিয়া গণ্য হইলাম না। উচ্চৈঃস্বরে কান্না ছাড়া যােগ্যতা প্রচার করার আর কোনাে উপায় আমার হাতে ছিল না। ইহার পূর্বে কোনােদিন গাড়িও চড়ি নাই, বাড়ির বাহিরও হই নাই, তাই সত্য যখন ইস্কুল-পথের ভ্রমণ-বৃত্তান্তটিকে অতিশয়ােক্তি-অলংকারে প্রত্যহই অত্যুজ্জ্বল করিয়া তুলিতে লাগিল তখন ঘরে আর মন কিছুতেই টিকিতে চাহিল না। যিনি আমাদের শিক্ষক ছিলেন তিনি আমার মােহ বিনাশ করিবার জন্য প্রবল চপেটাঘাতসহ এই সারগর্ভ কথাটি বলিয়াছিলেন: “এখন ইস্কুলে যাবার জন্য যেমন কঁদিতেছ, না যাবার জন্য ইহার চেয়ে অনেক বেশি কাঁদিতে হইবে।” সেই শিক্ষকের নামধাম আকৃতিপ্রকৃতি আমার কিছুই মনে নাই—কিন্তু সেই গুরুবাক্য ও গুরুতর চপেটাঘাত স্পষ্ট মনে জাগিতেছে। এতবড়াে অব্যর্থ ভবিষ্যদ্বাণী জীবনে আর কোনােদিন কর্ণগােচর হয় নাই।

 কান্নার জোরে ওরিয়েণ্টাল সেমিনারিতে অকালে ভর্তি হইলাম। সেখানে কী শিক্ষালাভ করিলাম মনে নাই কিন্তু