পাতা:জীবন-স্মৃতি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৩৪৮).pdf/১২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঘরের পড়া।
১১৯

বাহির হইয়াছিল তখন সে-বই পড়িবার বয়স আমাদের হয় নাই। আমার কোনো একজন দূরসম্পর্কীয় আত্মীয়া সেই বইখানি পড়িতেছিলেন। অনেক অনুনয় করিয়া তাঁহার কাছ হইতে উহা আদায় করিতে পারিলাম না। সে-বই তিনি বাক্সে চারিবন্ধ করিয়া রাখিয়াছিলেন। নিষেধের বাধায় আমার উৎসাহ আরও বাড়িয়া উঠিল, আমি তাঁহাকে শাসাইলাম, এ বই আমি পড়িবই।

 মধ্যাহ্নে তিনি গ্রাবু খেলিতেছিলেন—আঁচলে বাঁধা চাবির গোচ্ছা তাঁর পিঠে ঝুলিতেছিল। তাসখেলায় আমার কোনোদিন মন যায় নাই, তাহা আমার কাছে বিশেষ বিরক্তিকর বোধ হইত। কিন্তু সেদিন আমার ব্যবহারে তাহা অনুমান করা কঠিন ছিল। আমি ছবির মতো স্তব্ধ হইয়া বসিয়া ছিলাম। কোনো এক পক্ষে আসন্ন ছক্কাপাঞ্জার সম্ভাবনায় খেলা যখন খুব জমিয়া উঠিয়াছে এমন সময় আমি আস্তে আস্তে আঁচল হইতে চাবি খুলিয়া লইবার চেষ্টা করিলাম। কিন্তু এ কার্যে অঙ্গুলির দক্ষতা ছিল না, তাহার উপর আগ্রহেরও চাঞ্চল্য ছিল—ধরা পড়িয়া গেলাম। যাঁহার চাবি তিনি হাসিয়া পিঠ হইতে আঁচল নামাইয়া চাবি কোলের উপর রাখিয়া আবার খেলায় মন দিলেন।

 এখন আমি একটা উপায় ঠাওরাইলাম। আমার এই আত্মীয়ার দোক্তা খাওয়া অভ্যাস ছিল। আমি কোথাও হইতে একটি পাত্রে পান দোক্তা সংগ্রহ করিয়া তাঁহার সম্মুখে রাখিয়া দিলাম। যেমনটি আশা করিয়াছিলাম তাহাই ঘটিল।