পাতা:জীবন-স্মৃতি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৩৪৮).pdf/২০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিলাতি সংগীত
১৯৯

ও তবলাটাকে ঠকাঠক শব্দে হাতুড়িপেটা করিতে কিছুই মনে করি না। কিন্তু য়ুরোপে এই সকল উদ্যোগকে নেপথ্যে লুকাইয়া রাখা হয়—সেখানে বাহিরে যাহা কিছু প্রকাশিত হয় তাহা একেবারেই সম্পূর্ণ। এইজন্য সেখানে গায়কের কণ্ঠস্বরে কোথাও লেশমাত্র দুর্বলতা থাকিলে চলে। আমাদের দেশে গান সাধাটাই মুখ্য, সেই গানেই আমাদের যত-কিছু দুরূহতা;—য়ুরোপে গলা সাধাটাই মুখ্য, সেই গলার স্বরে তাহার অসাধ্য সাধন করে। আমাদের দেশে যাহারা প্রকৃত শ্রোতা তাহারা গানটাকে শুনিলেই সন্তুষ্ট থাকে, য়ুরোপের শ্রোতারা গান-গাওয়াটাকে শোনে। সেদিন ব্রাইটনে তাই দেখিলাম—সেই গায়িকাটির গান গাওয়া অদ্ভুত আশ্চর্য। আমার মনে হইল যেন কণ্ঠস্বরে সার্কাসের ঘোড়া হাঁকাইতেছে। কণ্ঠনালীর মধ্যে সুরের লীলা কোথাও কিছুমাত্র বাধা পাইতেছে না। মনে যতই বিস্ময় অনুভব করি না কেন সেদিন গানটা আমার একেবারেই ভালো লাগিল না। বিশেষত তাহার মধ্যে স্থানে স্থানে পাখির ডাকের নকল ছিল, সে আমার কাছে অত্যন্ত হাস্যজনক মনে হইয়াছিল। মোটের উপর আমার কেবলই মনে হইতে লাগিল মনুষ্য কণ্ঠের প্রকৃতিকে যেন অতিক্রম করা হইতেছে। তাহার পরে পুরুষ গায়কদের গান শুনিয়া আমার আরাম বোধ হইতে লাগিল—বিশেষত “টেনর” গলা যাহাকে বলে—সেটা নিতান্ত একটা পথহারা ঝ’ড়ো হাওয়ার অশরীরী বিলাপের মতো নয়—তাহার মধ্যে নরকণ্ঠের রক্তমাংসের পরিচয়