পাতা:জীবন-স্মৃতি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৩৪৮).pdf/৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮
জীবন-স্মৃতি

অনায়াসেই বহন করে সেই ভার শাসনকর্তার উপরে পড়ে। তখন ঘােড়াকে মাটিতে চলিতে না দিয়া তাহাকে কাঁধে লইয়া বেড়ানো হয়। যে বেচারা কাঁধে করে তাহার মেজাজ ঠিক থাকে না। মজুরির লােভে কাঁধে করে বটে কিন্তু ঘােড়া-বেচারার উপর পদে পদে শােধ লইতে থাকে।

 এই আমাদের শিশুকালের শাসনকর্তাদের মধ্যে অনেকেরই স্মৃতি কেবল কিল-চড় আকারেই মনে আছে—তাহার বেশি আর মনে পড়ে না। কেবল একজনের কথা খুব স্পষ্ট মনে জাগিতেছে।

 তাহার নাম ঈশ্বর। সে পূর্বে গ্রামে গুরুমশায়গিরি করিত। সে অত্যন্ত শুচিসংযত আচারনিষ্ঠ বিজ্ঞ এবং গম্ভীর প্রকৃতির লােক। পৃথিবীতে তাহার শুচিতারক্ষার উপযােগী মাটি-জলের বিশেষ অসদ্ভাব ছিল। এইজন্য এই মৃৎপিণ্ড মেদিনীর মলিনতার সঙ্গে সর্বদাই তাহাকে যেন লড়াই করিয়া চলিতে হইত। বিদ্যুৎবেগে ঘটি ডুবাইয়া পুষ্করিণীর তিন-চার হাত নিচেকার জল সে সংগ্রহ করিত। স্নানের সময় দুই হাত দিয়া অনেকক্ষণ ধরিয়া পুষ্করিণীর উপরিতলের জল কাটাইতে কাটাইতে অবশেষে হঠাৎ এক সময় দ্রুতগতিতে ডুব দিয়া লইত যেন পুষ্করিণীটিকে কোনােমতে অন্যমনস্ক করিয়া দিয়া ফাঁকি দিয়া মাথা ডুবাইয়া লওয়া তাহার অভিপ্রায়। চলিবার সময়ে তাহার দক্ষিণ হস্তটি এমন একটু বক্রভাবে দেহ হইতে স্বতন্ত্র হইয়া থাকিত যে বেশ বোঝা