পাতা:জীবন-স্মৃতি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৩৪৮).pdf/৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভৃত্যরাজক তন্ত্র
২৯

যাইত তাহার ডান হাতটা তাহার শরীরের কাপড়চোপড়-গুলাকে পর্যন্ত বিশ্বাস করিতেছে না। জলে স্থলে আকাশে এবং লােকব্যবহারের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অসংখ্য দোষ প্রবেশ করিয়া আছে, অহােরাত্র সেইগুলাকে কাটাইয়া চলা তাহার এক বিষম সাধনা ছিল। বিশ্বজগৎটা কোনাে দিক দিয়া তাহার গায়ের কাছে আসিয়া তাহার পক্ষে অসহ্য। অতলস্পর্শ তাহার গাম্ভীর্য ছিল। ঘাড় ঈষৎ বাঁকাইয়া মন্দ্রস্বরে চিবাইয়া চিবাইয়া সে কথা কহিত। তাহার সাধুভাষার প্রতি লক্ষ্য করিয়া গুরুজনেরা আড়ালে প্রায়ই হাসিতেন। তাহার সম্বন্ধে আমাদের বাড়িতে একটা প্রবাদ রটিয়া গিয়াছিল যে সে “বরানগর"কে “বরাহনগর” বলে। এটা জনশ্রুতি হইতে পারে কিন্তু আমি জানি “অমুক লােক বসে আছেন”—না বলিয়া সে বলিয়াছিল “অপেক্ষা করছেন। তাহার মুখের এই সাধুপ্রয়ােগ আমাদের পারিবারিক কৌতুকালাপের ভাণ্ডারে অনেকদিন পর্যন্ত সঞ্চিত ছিল। নিশ্চয়ই এখনকার দিনে ভদ্রঘরের কোনো ভৃত্যের মুখে “অপেক্ষা করছেন” কথাটা হাস্যকর নহে। ইহা হইতে দেখা যায় বাংলায় গ্রন্থের ভাষা ক্রমে চলিত ভাষার দিকে নামিতেছে এবং চলিত ভাষা গ্রন্থের ভাষার দিকে উঠিতেছে;—একদিন উভয়ের মধ্যে আকাশপাতাল ভেদ ছিল এখন তাহা প্রতিদিন ঘুচিয়া আসিতেছে।

 এই ভূতপূর্ব গুরুমহাশয় সন্ধ্যাবেলায় আমাদিগকে সংযত