পাতা:জীবন-স্মৃতি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৩৪৮).pdf/৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভৃত্যরাজক তন্ত্র
৩১

বলিয়া ভৃত্যসমাজে পদমর্যাদায় সে অনেকের চেয়ে হীন ছিল, তবু, কুরুসভায় ভীষ্ম পিতামহের মতে, আপনার কনিষ্ঠদের চেয়ে নিম্ন আসনে বসিয়াও আপন গুরুগৌরব অবিচলিত রাখিয়াছিল।

 এই আমাদের পরম প্রাজ্ঞ রক্ষকটির যে একটি দুর্বলতা ছিল তাহা ঐতিহাসিক সত্যের অনুরােধে অগত্যা প্রকাশ করিতে হইল সে আফিম খাইত। এই কারণে তাহার পুষ্টিকর আহারের বিশেষ প্রয়ােজন ছিল। এই জন্য আমাদের বরাদ্দ দুধ যখন সে আমাদের সামনে আনিয়া উপস্থিত করিত তখন সেই দুধ সম্বন্ধে বিপ্রকর্ষণ অপেক্ষা আকর্ষণ শক্তিটাই তাহার মনে বেশি প্রবল হইয়া উঠিত। আমরা দুধ খাইতে স্বভাবতই বিতৃষ্ণা প্রকাশ করিলে আমাদের স্বাস্থ্যোন্নতির দায়িত্বপালন উপলক্ষ্যেও সে কোনােদিন দ্বিতীয়বার অনুরােধ বা জবরদস্তি করিত না।

 আমাদের জলখাবার সম্বন্ধেও তাহার অত্যন্ত সংকোচ আমরা খাইতে বসিতাম। লুচি আমাদের সামনে একটা মােটা কাঠের বারকোশে রাশ করা থাকিত। প্রথমে দুই-একখানি মাত্র লুচি যথেষ্ট উঁচু হইতে শুচিতা বাঁচাইয়া সে আমাদের পাতে বর্ষণ করিত। দেবলােকের অনিচ্ছাসত্ত্বেও নিতান্ত তপস্যার জোরে যে বর মানুষ আদায় করিয়া লয় সেই বরের মতাে, লুচিকয়খানা আমাদের পাতে আসিয়া পড়িত; তাহাতে পরিবেষণকর্তার কুষ্ঠিত দক্ষিণ হস্তের দাক্ষিণ্য প্রকাশ পাইত না। তাহার পর ঈশ্বর প্রশ্ন করিত, ছিল।