পাতা:জীবন-স্মৃতি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৩৪৮).pdf/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৬
জীবন-স্মৃতি

আমি সকল ছাত্রের শেষে নীরবে বসিয়া থাকিতাম। যখন পড়া চলিত তখন সেই অবকাশে পৃথিবীর অনেক দুরূহ সমস্যার মীমাংসাচেষ্টা করিতাম। একটা সমস্যার কথা মনে আছে। অস্ত্রহীন হইয়াও শত্রুকে কী করিলে যুদ্ধে হারানাে যাইতে পারে সেটা আমার গভীর চিন্তার বিষয় ছিল। ওই ক্লাসের পড়া শুনার গুঞ্জনধ্বনির মধ্যে বসিয়া ওই কথাটা মনে মনে আলােচনা করিতাম তাহা আজও আমার মনে আছে। ভাবিতাম কুকুর বাঘ প্রভৃতি হিংস্ৰজন্তুদের খুব ভালাে করিয়া শায়েস্তা করিয়া প্রথমে তাহাদের দুই-চারি সার যুদ্ধ-ক্ষেত্রে যদি সাজাইয়া দেওয়া যায় তবে লড়াইয়ের আসরের মুখবন্ধটা বেশ সহজেই জমিয়া ওঠে; তাহার পরে নিজেদের বাহুবল কাজে খাটাইলে জয়লাভটা নিতান্ত অসাধ্য হয় না। মনে মনে এই অত্যন্ত সহজ প্রণালীর রণসজ্জার ছবিটা যখন কল্পনা করিতাম তখন যুদ্ধক্ষেত্রে স্বপক্ষের জয় একেবারে সুনিশ্চিত দেখিতে পাইতাম। যখন হাতে কাজ ছিল না। তখন কাজের অনেক আশ্চর্য সহজ উপায় বাহির করিয়া, ছিলাম। কাজ করিবার বেলায় দেখিতেছি যাহা কঠিন তাহা কঠিনই, যাহা দুঃসাধ্য তাহা দুঃসাধ্যই,ইহাতে কিছু অসুবিধা আছে বটে কিন্তু সহজ করিবার চেষ্টা করিলে অসুবিধা আরও সাতগুণ বাড়িয়া উঠে।

 এমনি করিয়া সেই ক্লাসে এক বছর যখন কাটিয়া গেল তখনবমধুসূদন বাচস্পতির নিকট আমাদের বাংলার বাৎসরিক পরীক্ষা হইল। সকল ছেলের চেয়ে আমি বেশি নম্বর