পাতা:জীবন-স্মৃতি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৩৪৮).pdf/৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৮
জীবন-স্মৃতি

পদ্য যে নিজে চেষ্টা করিয়া লেখা যাইতে পারে এ-কথা কল্পনা করিতেও সাহস হইত না। একদিন আমাদের বাড়িতে চোর ধরা পড়িয়াছিল। অত্যন্ত ভয়ে ভয়ে অথচ নিরতিশয় কৌতূহলের সঙ্গে তাহাকে দেখিতে গেলাম। দেখিলাম নিতান্তই সে সাধারণ মানুষের মতো। এমন অবস্থায় দরােয়ান যখন তাহাকে মারিতে শুরু করিল আমার মনে অত্যন্ত ব্যথা লাগিল। পদ্যসম্বন্ধেও আমার সেই দশা হইল। গােটাকয়েক শব্দ নিজের হাতে জোড়াতাড়া দিতেই যখন তাহা পয়ার হইয়া উঠিল তখন পদ্যরচনার মহিমাসম্বন্ধে মােহ আর টিকিল না। এখন দেখিতেছি পদ্য বেচারার উপরেও মার সয় না। অনেক সময় দয়াও হয়, কিন্তু মারও ঠেকানো যায় না, হাত নিসপিস করে। চোরের পিঠেও এত লোকের এত বাড়ি পড়ে নাই।

 ভয় যখন একবার ভাঙিল তখন আর ঠেকাইয়া রাখে কে। কোনো একটি কর্মচারীর কৃপায় একখানি নীল-কাগজের খাতা জোগাড় করিলাম। তাহাতে স্বহস্তে পেনসিল দিয়া কতকগুলা অসমান লাইন কাটিয়া বড়ো বড়াে কাঁচা অক্ষরে পদ্য লিখিতে শুরু করিয়া দিলাম।

 হরিণ-শিশুর নূতন শিং বাহির হইবার সময় সে যেমন যেখানে-সেখানে গুতা মারিয়া বেড়ায়, নূতন কাব্যোগম লইয়া আমি সেইরকম উৎপাত আরম্ভ করিলাম। বিশেষত আমার দাদা আমার এই সকল রচনায় গর্ব অনুভব করিয়া শ্রোতাসংগ্রহের উৎসাহে সংসারকে একেবারে অতিষ্ট করিয়া