পাতা:জীবন-স্মৃতি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৩৪৮).pdf/৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পিতৃদেব
৮১

 নিজের বাল্যকালের কথা। যিনি ভালাে করিয়া স্মরণ করিবেন তিনিই ইহা বুঝিবেন যে আগাগােড়া সমস্তই সুস্পষ্ট বুঝিতে পারাই সকলের চেয়ে পরম লাভ নহে। আমাদের দেশের কথকেরা এই তত্ত্বটি জানিতেন—সেইজন্য কথকতার মধ্যে এমন অনেক বড়াে বড়ো কানভরাট-করা সংস্কৃত শব্দ থাকে এবং তাহার মধ্যে এমন তত্ত্বকথাও অনেক নিবিষ্ট হয় যাহা শ্রোতারা কখনােই সুস্পষ্ট বােঝে না কিন্তু অভাসে পায়—এই আভাসে পাওয়ার মূল অল্প নহে। যাহারা শিক্ষার হিসাবে জমাখরচ খতাইয়া বিচার করেন তাহারাই অত্যন্ত কষাকষি করিয়া দেখেন যাহা দেওয়া গেল তাহা বুঝা গেল কি না। বালকেরা, এবং যাহারা অত্যন্ত শিক্ষিত নহ তাহার জ্ঞানের যে প্রথম স্বর্গলােক বাস করে সেখানে মানুষ না বুঝিয়াই পায়—সেই স্বর্গ হইতে যখন পতন হয় তখন বুঝিয়া পাইবার দুঃখের দিন আসে। কিন্তু একথাও সম্পূর্ণ সত্য নহে। জগতে, না বুঝিয়া পাইবার রাস্তাই সকল সময়েই সকলের চেয়ে বড়াে রাস্তা। সেই রাস্তা একেবারে বন্ধ হইয়া গেলে সংসারের পাড়ায় হাটবাজার বন্ধ হয় না বটে কিন্তু সমুদ্রের ধারে যাইবার উপায় আর থাকে না, পর্বতের শিখরে চড়াও অসম্ভব হইয়া উঠে।

 তাই বলিতেছিলাম, গায়ত্রীমন্ত্রের কোনাে তাৎপর্য আমি সে বয়সে যে বুঝিতাম তাহা নহে কিন্তু মানুষের অন্তরের মধ্যে এমন কিছু একটা আছে সম্পূর্ণ না বুঝিলেও যাহা চলে। তাই আমার এক দিনের কথা মনে পড়ে