পাতা:জোড়াসাঁকোর ধারে.djvu/৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
জোড়াসাঁকোর ধারে
৬৫

 ‘আমি ফেলা।’

‘ও, ফেলা, তা এসো।’

 দেখে বড় আনন্দ হল। যখন ফেলে-দেওয়া জিনিস নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করছি, নতুন রূপ দিচ্ছি, তখন এল ফেলাবতী আমার। বললুম, ‘কোত্থেকে আসিস? ঘর কোথায়?’

 বললে, ‘এই এখান থেকেই।’ বলে রাস্তার মোড়ের দিকটা দেখালে।

 ‘কে আছে তোর?’

 ‘মা আছে।’

 ‘কি নাম?’

 ‘কৌমুদী।’

 ‘বাপের নাম কি?’

 ‘বসন্ত।’

 ভাবছি, এ কোন্‌ ফেলা এল। মনে হল না, সে মানুষ।

 বললুম, ‘কি চাই তোর?’

 ‘আমি এখানে বসে খেলা করিনে একটু?’

 ‘তা বেশ তো, কর্‌ তুই খেলা। বলি, ফেলা একটা সন্দেশ খাবি?’

 ‘তা খাব।’

 রাধুকে বলি, ‘রাধু, আমার ফেলার জন্যে সন্দেশ নিয়ে আয় একটা।’ সে মুখ বাঁকিয়ে চলে যায়। একটা সন্দেশ আর মাটির গেলাসে জল এনে দেয়। ফেল সন্দেশ খেয়ে জল খেয়ে গেলাসটি এক কোণায় রেখে দেয়।

 বলি, ‘কেমন লাগল?’

 ফেলা বলে, ‘তোমাদের সন্দেশ কেমন আঠা-আঠা, গলায় লেগে যায়। মা খাওয়ায় কটকটে সন্দেশ, সে আরো ভালো।’

 ‘তা বেশ।’ এমনি রোজ আসে সে সন্দেশ খাইয়ে ভাবসাব করি। সে একপাশে বসে খেলে, আমিও খেলি। ভাঙা কাঠকুটো নুড়ি দিই। সে বসে তাই দিয়ে খেলা করে। পাশের একটা টেবিলে পুতুল গড়ে গড়ে রাখি।

 সে বললে, ‘এগুলোর ধুলো ঝেড়ে রাখি?’

 ‘তা রাখো।’

 সে ধুলো ঝাড়ে, তাতে হাত বোলায়।

 ‘বলি, পুতুল নিবি একটা?’