পাতা:ঝাঁশির রাণী - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭০
ঝাঁশির বাণী।

গুলি সৈন্য পাঠাইয়া দিলেন—তাহারা পৌছিবামাত্র কেল্লার সর্দার কেল্লার দ্বার উদঘাটন করিয়া দিল। তাত্যাটোপের সৈন্যগণ, সমস্ত যুদ্ধ- সামগ্রীর সহিত কেল্লা অধিকার করিল। কেল্লা দখল করিয়া বিদ্রোহীরা দেওয়ান দিনকর-রাও এবং অন্যান্য মান্যগণ্য লোকদিগের গৃহ ভূমিসাৎ করিল এবং সহরে লুঠপাঠ আরম্ভ করিয়া দিল। কিন্তু রাও-সাহেব, নগরবাসীদিগের প্রতি কোন প্রকার অত্যাচার না হয় এইরূপ ঘোষণা করিয়া দিয়া লুঠপাঠ শীঘ্রই বন্ধ করিয়া দিলেন।

 ৩রা জুন তারিখে দরবার আহ্বান করিয়া রাজ্যাভিষেক-ক্রিয়া সমাপন করিয়া, রাও-সাহেব, পেশোয়া রাজসিংহাসনে আরোহণ করিলেন। গোয়ালিয়ারে, “গঙ্গা-দশহরা' উপলক্ষে ব্রাহ্মণ-ভোজনের প্রথা থাকায়, তিনি প্রতিদিন সহস্র সহস্র ব্রাহ্মণকে আকণ্ঠ ভোজন করাইয়া সুবর্ণ দক্ষিণা দিয়া বিদায় করিতে লাগিলেন। এইরূপ চারিদিন ধরিয়া বিজয়গাৎসব চলিতে লাগিল। এদিকে সহিউ-রোজ বিদ্রোহিদলদিগকে পরাভব করিতে করিতে ক্রমশঃ গোয়ালিয়ারের নিকটবর্তী মুরারের ছাউনীতে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। পূর্ব্বে রাও-সাহেব এ সংবাদ জানিতে পারেন নাই। তিনি ব্রাহ্মণ ভোজন করাইতেই ব্যস্ত ছিলেন। এই সংবাদ যখন শুনিলেন, তখন তিনি তাত্যাটোপেকে সৈন্যের ব্যবস্থা করিতে হুকুম দিলেন কিন্তু স্বয়ং ব্রাহ্মণভোজন লইয়াই ব্যাপৃত রহিলেন।

 তাত্যা-টোপে মুরারের ছাউনী রক্ষণার্থ সসৈন্যে অগ্রসর হইলেন, উভয় পক্ষে দুই ঘণ্টা ধরিয়া যুদ্ধ হইল, অবশেষে ইংরাজেরা মুরার দখল করিল। এই সংবাদ পাইবামাত্র রাও-সাহেব এস্তব্যস্ত হইয়া সৈন্যশিবিরে আসিয়া উপস্থিত হইলেন এবং যুদ্ধের আয়োজন করিতে লাগিলেন। রাণীঠাকুরাণীর সহিত সাক্ষাৎ করিয়া অতি নম্রতাপূর্ব্বক তাহার সাহায্য প্রার্থনা করিলেন এবং এই আসন্ন বিপৎকালে কি কর্তব্য তাহার পরামর্শ জিজ্ঞাসা করিলেন।