পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/৩৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২৮
তিতাস একটি নদীর নাম

 পলকে গান থামিয়া গেল। বাধা পাইয়া গায়কের মুখ বেদনায় মলিন হইয়া গেল। কোন উত্তর না দিয়া সে মাথ। নিচু করিল।

 ছাদিরের মনে বড় কষ্ট হইল। তাই তো, ওতো কেবল গানই গাহিয়াছে, গানের কথার ভিতর কি আছে না আছে সেদিকে তো তার লক্ষ্য ছিল না। আপন সুরে আপনি মাতোয়ারা হইয়া সে তো কেবল কোন্ বিস্মৃত যুগের কোন বিরহিণী নারীর কথাগুলি বৈকালী-হাওয়ায় মাঠের বুকে ঢালিয়া দিয়াছে মাত্র। তার দোষ কোথায়? হাঁটুজলে খাল পার হইয়া ছাদির এপারে আসিল, তারপর ছেলের হাত ধরিয়া ফিরিতে ফিরিতে ঘাড় বাঁকাইয়া বলিল, ‘গান থামাইল। কেনে, গুন্‌গুনাইয়া গাও, গুন্‌গুনাইয়া গাও।’


 উঠানের বুকটা চিতানো। জল জমিতে পারে না, সব সময় শুক্‌না, ঠন্‌ঠনে। বিকালে একপাল হাঁসমুরগী সেখানে ঝি-পুত লইয়া চরিয়া বেড়াইয়াছে এবং সারাটা উঠান নোংরা করিয়াছে। গোলায় অজস্র ধান। সারা বছর খাইয়া বিলাইয়া, হাঁড়ি-পাতিল খইয়ের-মোয়া রাখিয়াও সে-ধান কমে না, এমনি অজস্র। ঢেঁকিঘরে সাপের গর্ত ধরা পড়িয়াছে। মাটি খুড়িয়া নিঃসন্দেহ না হওয়া পর্যন্ত সেখানে গিয়া ধান ভানা চলে না। জ্যোৎস্না রাতের সাঁঝ। সেই উঠানেরই একদিকে ননদদের লইয়া ধান ভানিতে হইবে। মস্তবড় ঝাঁটাখানা দুই হাতে ধরিয়া কোমর বাঁকাইয়া অতবড় উঠানখানা ঝাড়ু দিয়া শেষ