পাতা:তিনসঙ্গী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৫8
তিন সঙ্গী

লিখেছিলে বাঙালির খাদ্যে ভিটেমিনের প্রভাব, সে উনি পড়েছেন, তাই কেবল তোমাকে খুশি করবার জন্যে চিঁড়ে-কলার ফর্দ তোমাকে শোনালেন।”

 আমি ভাবলুম, মুশকিলে ফেললে। বাংলা কাগজে ডাক্তারের লেখা ভিটামিনের তত্ত্ব পড়া কোনোকালে আমার দ্বারা সম্ভব নয়; কিন্তু কবুল করি কী করে—বিশেষত উনি যখন উৎফুল্ল হয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “সেটা পড়েছেন নাকি।”

 আমি বললুম, “পড়ি বা না-পড়ি তাতে কিছু আসে যায় না, আসল কথা—”

 “আসল কথা, উনি নিশ্চয় জানেন কাল যদি ওঁকে খাওয়াই, তা হলে ওঁর পাতে পশুপক্ষী স্থাবরজঙ্গম কিছুই বাদ পড়বে না। সেইজন্যে অত নিশ্চিন্ত মনে বিলিতি বেগুনের নামকীর্তন করলেন। ওঁর শরীরটার দিকে দেখো না চেয়ে, শুধু শাকান্নে গড়া ব’লে কেউ সন্দেহ করতে পারে? দাদু, তুমি সবাইকেই অত্যন্ত বেশি বিশ্বাস করো, এমন-কি, আমাকেও। সেইজন্যে ঠাট্টা করে তোমাকে কিছু বলতে সাহস করি নে।”

 বলতে বলতে ধীরে ধীরে আমরা ওঁদের বাড়ির দিকে চলেছি, এমন সময় হঠাৎ অচিরা বলে উঠল, “এইবার আপনি ফিরে যান বাসায়।”

 “কেন, আমি ভেবেছিলুম আপনাদের বাড়ির দরজা পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে আসব।”

 “ঘর এলোমেলো হয়ে আছে। আপনি বলবেন, বাঙালি মেয়ের সব অগোছালো। কাল এমন করে সাজিয়ে রাখব যে, মেমসাহেবের কথা মনে পড়বে।”

 অধ্যাপক বললেন, “আপনি কিছু মনে করবেন না ডক্টর সেনগুপ্ত, অচি বেশি কথা কচ্ছে, কিন্তু ওর স্বভাব নয় সেটা। এখানে বড়ো নির্জন বলে ও জুড়ে রাখে আমার মনকে অনর্গল কথা