পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/৬৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একটিকে সে ভয় দেখাইয়া আরও পাগল করিল।” বলা বাহুল্য যে, সুবালা পূৰ্ব্বদিকের ঘরে আর শয়ন করিত না। পশ্চিম দিকের ঘরে সে বাস করিতে লাগিল। সুবালার খেলাইবার সঙ্গিনী আর হইল না। ওরূপ বিপদসঙ্কুল বাড়ীতে কেহই আপনার কন্যা পাঠাইতে সম্মত হইল না। গুরুমায়ের নিকট থাকিয়া সুবালা মনোযোগের সহিত বিদ্যা অধ্যয়ন করিতে লাগিল। কখন কখন ধনুকধারী আসিয়া পড়িবার ঘরে বসিত। সুবালা বাগানে বেড়াইতে গেলেও ধনুকধারীর সহিত সৰ্ব্বদা সাক্ষাৎ হইত। সুবালার প্রতি রায়মহাশয় ও তাহার। ভাৰ্যার স্নেহ-মমতার আর পরিসীমা রহিল না। পাছে সুবালার কোনরূপ অনিষ্ট হয়, সেজন্য সৰ্ব্বদাই তাঁহারা শঙ্কিত হইয়া রহিলেন । সুবালাকে সমুদয় সম্পত্তি লিখিয়া দিবার নিমিত্ত রায়মহাশয় কতবার চিন্তা করিলেন। কিন্তু এ পাপের বিষয় তাহাকে দিলে পাছে কোনরূপ অমঙ্গল ঘটে, সেই ভয়ে তিনি তাহা করিলেন না। “আমার অবৰ্ত্তমানে যাহা হয় হইবে”, এইরূপ ভাবিয়া তিনি চুপ করিয়া রহিলেন। পুনরায় শ্রাবণ মাস আসিল। সুবালা খুড়ামহাশয়ের বাড়ীতে গমন করিল। সে স্থানে পূৰ্ব্বের ন্যায় আমোদ-আহাদে কালব্যাপন করিতে লাগিল । ভাদ্র মাস পড়িল। ভাদ্র মাসের শেষে খাদা ভূত পুনরায় দেখা দিল। ঘোর রাত্রি। রায়মহাশয় নিদ্রা যাইতেছিলেন। সহসা আঁহার নিদ্ৰাভঙ্গ হইল। ঘরে আলো জুলিতেছিল। “টুপ” করিয়া একটি টিল। তাঁহার ঘরের ভিতর পড়িল। নিম্নে বাগান হইতে জানােলা দিয়া ঘরের ভিতর কে সেই ঢ়িলটি ফেলিল। রায়মহাশয় আপনি উঠিয়া বসিতে পারেন না। চাকর ঘরের মেজেতে শয়ন করিয়া নিদ্রা যাইতেছিল। তাহাকে — “গদা! গদা! আমাকে তুলিয়া বাসা।” SNర్ চাকর উঠতে না-উঠতে, "টুপ” করিয়া সুগ্ৰীকিট চিল পড়ল। “গদা! গদা! ওঠ । আমাকে তুলিয়া বৃষস্থাৎসর্গ রায় মহাশয় পুনরায় বলিলেন। “টুপ”—আর সেই মুহূৰ্ত্তে বাগানোেহাঁইরে ঘরের ঠিক নিম্নে খাদা ভূতের হু-হু শব্দ হইল। রায়মহাশয় অজ্ঞান হইয়া পড়িলেন। পক্ষাঘাত রোগের শেষ আক্রমণ দ্বারা তিনি আক্রান্ত হইলেন। তিন ঘণ্টা পরে তাহার পরলোক হইল। আহা! সেইদিন সন্ধ্যাবেলা রায়মহাশয় আক্ষেপ করিয়া বলিয়াছিলেন, — “টাকা স্থাদিয়া সুশরীর ক্রয় করিতে পারা যায় না। পক্ষাঘাত রোগে আমি কষ্ট ভোগ করিতেছি। টাকা আমাকে রোগ হইতে মুক্ত করিতে পারে না। অনেক ধনবান লোকের কথা আমি শুনিয়াছি, যাঁহাদের পাকস্থলী নষ্ট হইয়া গিয়াছে, পরিপাকশক্তি একেবারে লোপ পাইয়াছে, একটু সাবু খাইয়া তাহাদিগকে দিনপাত করিতে হয়। তাহারা টাকা দিয়া নূতন পাকস্থলী ক্রয় করিতে পারে না। যযাতি রাজার গল্প সকলেই অবগত আছেন। টাকা দিয়া প্রিয়জনের পরমায়ু ক্ৰয় করিতে পারা যায় না। আমার কথা দূরে থাকুক, বিপুল ঐশ্বৰ্য্যশালী রাজা-মহারাজকেও পুত্ৰ-কন্যার মৃত্যুজনিত মৰ্ম্মভেদী শোকে সন্তাপিত হইতে হয়। হায়, হায়! তবুও অধৰ্ম্ম করিয়া মানুষ অর্থে পাৰ্জন করিতে চেষ্টা করে। সেই অধৰ্ম্মের প্রতিফলস্বরূপ পরিণামের কত যে দুঃখ ভোগ করিতে হয়, সে সম্বন্ধে মানুষের যদি স্থির বিশ্বাস থাকিত, পাপের ফল যদি সঙ্গে সঙ্গে ফলিত, তাহা হইলে কখনই কেহ অধৰ্ম্ম করিত না । সুবালার মাতা সৰ্ব্বদাই কন্যা দুইটিকে বলিত—“দেখ সুচিন্তা! দেখ সুবালা! মিথ্যা কথা, মিথ্যাচরণ, নীচতা, নিষ্ঠুরতা, সৰ্ব্বদা বিষবৎ পরিত্যাগ করবে।” বেশ বুঝিতেছি যে, আমি আর অধিক দিন বাঁচিব না। দূর-অতিদূর পর্য্যন্ত

    • află cios (gs se - www.amarboi conf ماناكا