পাতা:দিবারাত্রির কাব্য - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দিবারাত্রির কাব্য । Sv• হওয়া এত বেশী তুচ্ছ যে, হেরম্ব ভাবতে পারল না, সুপ্রিয়া বুঝবে না। এ শুধু তার সময়োচিত গম্ভীর পরিহাস, সুপ্রিয়ার প্রস্তাবকে এমনি ভাবে দুর্বল হেরম্বের ক্ষেসে উড়িয়ে দেওয়া । সুপ্রিয়া কিন্তু সত্য সত্যই তার এই কথাকে স্বীকারোক্তি বলে ধরে নিল । “তার দরকার নেই, আমার গায়ে গয়না আছে।” একটু চিন্তা করে হেরম্ব বক্তব্য স্থির করে নিল । “শোন সুপ্রিয়া। তোর বিয়ের সময় তোকে একটা উপহারও কিনে দিইনি। আর আজ তোর গয়না বিক্রির টাকায় কলকাতা যাব ? এমন কথা তুই ভাবতে পারলি ! একবার তোর ভয় হল না, লজ্জায় ঘুণায় আমি তাহলে চলন্ত ট্রেণ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করব ? সুপ্রিয়ার হাত এতক্ষণে হয়ত অবশ হয়ে এসেছিল, তাত মুচড়ে তার শরীরের আশ্রয়চু্যত উর্দুভাগ হেরম্বের কোলে হুমড়ি দিয়ে পড়লে অস্বাভাবিক হত না । কিন্তু সে সোজা হয়েই বসল ; স্তব্ধ, নিশ্চল, কাঠের মূৰ্ত্তির মত। রূপাইকুড়ায় হেরম্বের সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে শুকনো ঘাসে-ঢাকা মাঠে সে এমনিভাবে বসেছিল ! হেরম্বের মনে আছে। তখন সূৰ্য্য অস্ত গিয়ে সন্ধ্যা হয়েছিল । আজি সুৰ্য্যাস্তের সূচনা মাত্র হয়েছে । ছোট একটি মেঘ এত জোরে ছুটে আসছে যে, সূৰ্য্যাস্তের আগেই সূৰ্য্যকে ঢেকে ফেলবে। সুপ্রিয়ার মুখ থেকে আকাশে দৃষ্টিকে সরিয়ে নিয়ে যেতে যেতে হেরম্বের মুখও বিবৰ্ণ মান হয়ে গেল । দু’হাতে ভর দিয়ে সে বসেছে। দুই করতলে সুন্ম শীতল বালির স্পর্শ অনুভব করে তার মনে হল, যে পৃথিবীর সবুজ তৃণাচ্ছাদিত হওয়ার কথা, তার আগাগোড়া হয়ে গেছে মরুভূমি। O