পাতা:দিবারাত্রির কাব্য - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bro দিবরাত্রির কুৰ্গাব্য দামী ভুল যেন ভেঙ্গে যাচ্ছে একে একে, তার বিস্ময়ের, বেদনার সীমা নেই। হেরম্ব নিজের ভুল বুঝে সাভয়ে স্তব্ধ হয়ে গেল। তার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে ? এ কথা তার স্মরণ নেই যে তার মত আনন্দ আজ বাইরের পৃথিবীতে বেড়াতে যায় নি, পরম সহিষ্ণুতায় আলো ও অন্ধকারের যে সমন্বয় নিজের মধ্যে করে নিয়ে পৃথিবীর মানুষ ধৈৰ্য্য ধরে থাকে আনন্দের কাছে সে সহিষ্ণুতার নাম পরাজয় ? সুপ্রিয়ার আবির্ভাবের আগে সে নিজে কি মন নিয়ে এখানে দিন কাটাচ্ছিল হেরম্বের সে কথা মনে পড়ে । এখানে ‘আসবার আগে মনের সেই উদাত্ত উৰ্দ্ধগ অবস্থা তার কল্পনাতীত ছিল। কি সেই বিপুল একক পিপাসা,-প্ৰশান্ত, নিবিড়, অনির্বচনীয়। এইখানে গৃহকোণে বসে সমগ্ৰ অভিজাত মনোধিৰ্ম্মের বিরাট সমন্বয়ে চেতনার সেই অনাবিল নিরবিচ্ছিন্ন পুলক-স্পন্দন, বিশ্বের একপ্ৰান্তের ভাঙ্গা কুটির থেকে অন্য প্ৰান্তের রাজপ্ৰাসাদ পৰ্য্যন্ত প্রসারিত হৃদয়ে নিখিল-হৃদয়ের জীবনোৎসব, অনন্ত, উদার উপলব্ধির মেলা ! সেই মনে ছোট মেহ, ছোট মমতাকে কে খুজে পেয়েছে ? সে মনের আলো ছিল দিন, অন্ধকার ছিল রাত্রি,-অঙ্গনে বিছানো এক টুকরো রোদ আর তরুতলের ক্ষীণ ছায়ার যোগাযোগ আগের মত মনের আলো-ছায়ার খেলা সাঙ্গ হয়ে যেত না । সুপ্রিয়াকে মনে করতে হলে সেই মন নিয়ে হেরম্বকে সহরের ধূলিভরা পথে পথে বেড়াতে হত। আর আজ সুপ্রিয়ার কাছ থেকে পরিবৰ্ত্তিত, ছোট মমতায় ছোট সুখদুঃখে উদ্বেলিত মন নিয়ে এসে সে কি বলে এত সহজে আনন্দের মনের বিচার করে রায় দিচ্ছে ?