পাতা:দিবারাত্রির কাব্য - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SIC দিবারাত্রির কাব্য এতক্ষণে হেরম্বের মাথার মধ্যে ঝিম্ ঝিম করছে। এ আশ্রম অভিশপ্ত, মালতীর যুগব্যাপী অন্ধ অতৃপ্ত ক্ষুধায় এখানকার বাতাসও বিষাক্ত হয়ে আছে । গভীর নিশীথে এখানে মালতীর সঙ্গে একঘরে জেগে থাকলে দু’দিনে মানুষ পাগল হয়ে যাবে। " অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে মালতী ডাকল, “আনন্দ, ঘুমুলি ?” আনন্দ সাড়া দিল না । মালতী উঠে বসল।-“হেরম্ব ?” “জেগেই আছি ।” “আমার বুকে আগুন জ্বলছে হেরম্ব । আমি এখানে নিশ্বাস নিতে পারছি না। দাম আটকে আটকে আসছে।” “একটু ধৈৰ্য্য না ধরলে-” মালতী বাধা দিয়ে বলল, “কিছু বোল না। হেরম্ব। একবার ওঠ দিকি । শব্দ কোর না বাপু, মেয়ের ঘুম ভাঙ্গিও না।” মালতী উঠে দাঁড়াল। আনন্দের কাছে গিয়ে সে ঘুমন্ত মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইল পলকহীন চোখে । হেরম্ব উঠে এলে ফিস ফিস করে বলল, “দেখ, মুখ ঢেকে ঘুমিয়েছে। ওকে না জাগিয়ে মুখ থেকে কাপড়টা সরাতে পার হেরম্ব ? একবার মুখখানা দেখি ” হেরম্ব সন্তৰ্পণে আনন্দের মুখ থেকে আঁচল সরিয়ে দিল । খানিকক্ষণ একদৃষ্টি আনন্দের মুখ দেখে হাত দিয়ে তার চিবুক ছুয়ে মালতী চুমে খেল । তারপর পা টিপে টিপে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল । থামল সে একেবারে বাড়ীর বাইরে বাগানে। হেরম্ব তাকে অনুসরণ করল নীরবে ।