পাতা:দিবারাত্রির কাব্য - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

( ) দিবারাত্রির কাব্য হেরম্ব বলল, “ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের কথা আমার মনে থাকে না। মালতী-বৌদি। আপনার মেয়ে তখন খুব ছোটই ছিল নিশ্চয় ?” মালতী স্বীকার করে বলল, “নিশ্চয় ছোট ছিল । ছোট না থাকলে চুমু খেয়ে তাকে কাদাতে কি করে তুমি ! তাছাড়া, তখন ছোট না থাকলে মেয়ে তো আমার এ্যাদিনে বুড়ী হয়ে যেত!” তার পর এল আনন্দ | আনন্দকে দেখে হেরম্ব হঠাৎ অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়ল ! আনন্দ অপসারী নয়, বিদ্যাধরী নয়, তিলোত্তম নয়, মোহিনী নয় । তাকে চোখে দেখেই মুগ্ধ হওয়া যায়, উত্তেজিত হয়ে ওঠার কোন কারণ থাকে না । কিন্তু হেরম্বের কথা আলাদা। এই মালতীকে নয়, সত্যবাবুর মেয়ে' মালতীকে সে আজও ভুলতে পারে নি । এই স্মৃতির সঙ্গে তার মনে বারোবছর বয়সের খানিকটা ছেলেমানুষী, খানিকটা কঁচা ভাবপ্রবণতা আজও আটকে রয়ে গিয়েছে । আনন্দকে দেখে তার মনে হল সেই মালতীই যেন বিশ্ব-শিল্পীর কারখানা থেকে সংস্কৃত ও রূপান্তরিত হয়ে, গত বিশ বছর ধরে প্রকৃতির মধ্যে, নারীর মধ্যে, বোবা পশু ও পার্থীর মধ্যে, ভোরের শিশির আর সন্ধ্যা তারার মধ্যে রূপ, রেখা ও আলোর অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে, তাকে তৃপ্ত করার যোগ্যতা অর্জন করে, তার সামনে এসে দাড়িয়েছে। শীতকালের ঝরা শুকনো পাতাকে হঠাৎ একসময় বসন্তের বাতাস এসে যে ভাবে নাড়া দিয়ে যায়, আনন্দের আবির্ভাবও হেরম্বের জীর্ণ পুরাতন মনকে তেমনি ভাবে নাড়া দিয়ে দিল ।