আনারউন্নিসা কথাটা উড়াইয়া দিবার জন্য বলিল—“আজ তুমি বড় শ্রান্ত হইয়াছ! একটু সেরাজি দিব কি?”
সুজা বেগ কৃত্রিম বিরক্তির সহিত বলিলেন—“ছিঃ! ওকথা কি আর বলিতে আছে? যে নেশায় আজ আমাকে তোমার গোলাম করিয়া রাখিয়াছে সেরাজির নেশা কি তার চেয়েও বেশী জমাট? সেরাজির নেশা শীঘ্রই ছুটিয়া যায়! কিন্তু তোমার অই অফুরন্ত প্রেম মদিরায় উন্মত্ত হইয়া দুনিয়ায় সব ভুলিয়া, আমি যে মাতিয়া আছি, তাহা যে ছুটিবার নয় আনারউন্নিসা!
আনার সহাস্যমুখে বলিল—“সত্যি নাকি? আমি যদি কাল কবরে যাই। তাহা হইলে নেশা ছুটিয়া যাইবে না তো?”
সুজা বেগ মুখখানা গম্ভীর করিয়া বলিলেন—“ছি! ও কথা বলিতে নাই।
এই কথা বলিয়া আবেগভরে আনারকে বুকে জড়াইয়া লইয়া, নবাব সুজাবেগ তাঁহার এই নিষ্ঠুরতার প্রতিশোধ লইলেন।
এই সময়ে পাখীটা আবার চীৎকার করিয়া শীশ্ দিয়া উঠিল—“শি—শি” অর্থাৎ “ছিঃ—ছিঃ।”
দ্বাদশ পরিচ্ছেদ।
এইরূপ সুখ স্বপ্নঘেরা অবস্থায়, তিন চারি মাস কাটিয়া গেল। এই দীর্ঘকাল মধ্যে, বাহারবানুর কোন সংবাদই নাই। আর সে জন্য নবাব সুজাখাঁ একটুও দুঃখিত নহেন। কেন না, তখন তাঁহার গৃহকক্ষে এক সুরভিমাথা নন্দনের প্রতিষ্ঠা হইয়াছে।
১০৬