পাতা:নির্বাসিতের আত্মকথা - উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 নির্বাসিতের আত্মকথা হাড় ক’খানার উপর চামড়া জড়ানাে শীর্ণ শরীর, মাঠের মত কপাল, লম্বা, লম্বা, বড় বড় চােখ, আর খুব মোটা একটা নাক দেখিয়াই বুঝিয়াছিলাম যে, কল্পনা ও ভাবের আবেগে যাহারা অসম্ভবকে সম্ভব করিয়া তোলে বারীন্দ্ৰ তাহাদেরই একজন। অঙ্কশাস্ত্রের জালায় কলেজ ছাড়িয়া অবধি সারেঙ্গ বাজাইয়া, কবিতা লিখিয়া, পাটনায় চায়ের দোকান খুলিয়া এ যাবৎ অনেক কীষ্টিই সে করিয়াছে। বড় লোকের ছেলে হইয়া ও বিধাতার কৃপায় দুঃখ দারিদ্র্যের অভিজ্ঞতা হইতে বঞ্চিত হয় নাই । এইবার ৫০২ টাকা পুজি লইয়া যুগান্তর চালাইতে বসিয়াছে। দেখা হইবার পর তিন কথায় সে আমাকে বুঝাইয়া দিল যে, দশ বৎসরের মধ্যে ভারতবর্ষ স্বাধীন হইবেই। হইবে। ভারত-উদ্ধারের এমন সুযোগ ত আর ছাড়া চলে না ! আমিও বাসা হইতে পুটলী পািটলা গুটাইয়া আফিসে আসিয়া বসিলাম। কিছুদিন পরে দেবব্রত ‘নবশক্তি” অফিসে চলিয়া গেল ; ভূপেনও পূর্ববঙ্গে ঘুরিতে বাহির হইল। সুতরাং যুগান্তর-সম্পাদনার ভার বারীন্দ্র ও আমার উপরেই আসিয়া পড়িল। আমিও “কেষ্ট বিষ্ট"দের মধ্যে একজন হইয়া দাড়াইলাম। বাংলায় সে একটা অপূৰ্ব্ব দিন আসিয়াছিল! আশার বৃঙ্গীন নেশায় বাঙালীর ছেলেরা তখন ভরপুর। “লক্ষ পরাণে শঙ্কা না মানে, না রাখে কাহারো ঋণ।” কোন ?र्तौ স্পর্শে যেন বাঙালীর ঘুমন্ত প্ৰাণ সজাগ হইয়া উঠিয়াছিল। কোন অজানা দেশের আলোক আসিয়া তাহার মনের যুগযুগান্তের আধার কোণ উদ্ভাসিত করিয়া দিয়াছিল। “জীবন মৃত্যু পায়ের ভৃত্য, চিত্ত ভাবনা-হীন।”-রবীন্দ্ৰ যে ছবি আঁকিয়াছেন, তােহা সেই সময়কার বাঙালী ছেলেদের ছবি। সত্য সত্যই তখন একটা জ্বলন্ত বিশ্বাস আমাদের মনের মধ্যে জাগিয়া উঠিয়াছিল। আমরাই