বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:নিষ্কৃতি - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বাড়াবাড়ি কিন্তু ভাল নয় দিদি।

 সিদ্ধেশ্বরী এত কথায় বোধ করি মন দিতে পারেন নাই; নিরীহভাবে জবাব দিলেন, তা বটে। এ বাড়ির মণি থেকে পটল পর্যন্ত সবাই ঐ শৈলর বশে। সে যা বলবে যা করবে, তাই হবে—কেউ আমাকে মানেও না।

 এটা কি ভাল?

 সিদ্ধেশ্বরী মুখ তুলিয়া বলিলেন, কোনটা?—ওরে ও নীলা, তোর খুড়ীমাকে একবার ডেকে দে ত মা।

 নীলা কি কাজে এইদিকে আসিতেছিল, ফিরিয়া গেল। নয়নতারা আর কথা কহিল না, সিদ্ধেশ্বরীও উৎসুকভাবে অপেক্ষা করিয়া রহিলেন।

 শৈলজা ঘরে ঢুকিতে না ঢুকিতেই তিনি বলিয়া উঠিলেন, জিনিসপত্র বাঁধা হয়েছে—এরা তবে চলে যাক।

 শৈল কিছুই জানি না, একটু ভীত হইয়া কহিল, কেন?

 সিদ্ধেশ্বরী বলিলেন, তা বৈ কি—কি পাষাণ প্রাণ তোর শৈল! তোর হুকুমে কেউ অতুলের সঙ্গে খেলা করে না, কথাবার্তা পর্যন্ত কয়—কি করে বাছার দিন কাটে, শুনি? আর নিজের ছেলের দিবারাত্রি শুকনো মুখ দেখে বাপ-মাই বা কেমন করে এখানে বাস করে? তুই এদের তা হলে এ বাড়িতে রাখতে চাসনে বল?

 নয়নতারা চিমটি কাটিয়া কহিল, তা হলে হয়ত সবদিকেই ছোটবৌর হয় ভাল।

 শৈলজা এ কথা কানে তুলিল না। সিদ্ধেশ্বরীকে কহিল, অমন ছেলের সঙ্গে আমি বাড়ির কোনও ছেলেকেই মিশতে দিতে পারিনে ও যে কি মন্দ হয়ে গেছে, তা মুখে বলা যায় না।

 নয়নতারা আর সহ্য করিতে পারিল না। ক্রুদ্ধ সর্পিণীর মত মাথা তুলিয়া গর্জিয়া উঠিল—হতভাগী, মায়ের মুখের সামনে তুই অমন করে ছেলের নিন্দে করিস। দুর হ আমার ঘর থেকে। মুখ ফেন তোর ধসে যায়।

২৬