পাতা:নেতাজী সুভাষ চন্দ্র - হেমেন্দ্রবিজয় সেন.pdf/৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নেতাজী সুভাষচন্দ্র
৬৭

 সুভাষচন্দ্র ভারতবর্ষ ছাড়িয়া বিদেশে চলিয়া গিয়াছেন, এই সংবাদ একদিন সত্য বলিয়া প্রমাণিত হইল সুভাষচন্দ্রের নিজের কথায়। তিনি একদিন রেডিয়ো-বার্ত্তায় ঘোষণা করিলেন,—

 “বিগত ২০০ বৎসরের বৈদেশিক ইতিহাস আমি গভীর অভিনিবেশ-সহকারে পাঠ করিয়াছি—বিশেষতঃ স্বাধীনতা-সংগ্রামের ইতিহাস। কিন্তু কোথাও বৈদেশিক সাহায্য ব্যতিরেকে কোন দেশ স্বাধীনতা অর্জ্জন করিয়াছে, এইরূপ একটি দৃষ্টান্তও পাই নাই; এবং ব্রিটেনও শুধু যে স্বাধীন জাতির সাহায্য গ্রহণ করিতেছে এমন নয়, পরন্তু ভারতের মত পরাধীন দেশের সাহায্যও গ্রহণ করিতেছে। যদি ব্রিটেনের সাহায্য ভিক্ষার কোন দোষ না থাকে, তবে সাহায্য গ্রহণে ভারতের পক্ষে তো কোন দোষই নাই; এবং আমরা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধে সর্ব্বপ্রকার সাহায্যই সাদরে বরণ করিব।[১]

 সুভাষচন্দ্রের এই রেডিয়ো-বার্ত্তায় স্পষ্টই বুঝিতে পারা গিয়াছিল যে, স্বাধীনতার উদগ্র নেশায় উন্মাদের ন্যায় আত্মহারা হইয়া, বিপদ্-সঙ্কুল বিশ্বের পথে অতি রহস্যজনক ভাবে তিনি যে অন্তর্হিত হইয়াছিলেন, তাহার মূলে ছিল, বিদেশী শক্তির সাহায্যে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আনয়নের আকাঙক্ষা; কিন্তু পরাধীন দেশের এক পলাতক বন্দীর পক্ষে এমন আকাঙক্ষা—ইহা কি স্বপ্ন নহে?

  1. “If there is nothing wrong in Britain begging for help, there can be nothing wrong in India accepting an offer of assistance which she needs, and we shall welcome any help in India in our struggle against British Imperialism.”—Ibid, P. 442(r).