পাতা:নৌকাডুবি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

এ বিবাহ আমার পক্ষে অসাধ্য। আমি অন্য স্থানে পণে আবদ্ধ হইয়াছি।”

 ব্রজমোহন। বল কী! একেবারে পানপত্র হইয়া গেল?

 রমেশ। না, ঠিক পানপত্র নয়, তবে–

 ব্রজমোহন। কন্যাপক্ষের সঙ্গে কথাবার্তা সব ঠিক হইয়া গেছে?

 রমেশ। না, কথাবার্তা যাহাকে বলে তাহা হয় নাই–

 ব্রজমোহন। হয় নাই তো! তবে এতদিন যখন চুপ করিয়া আছ, তখন আর ক’টা দিন চুপ করিয়া গেলেই হইবে।

 রমেশ একটু নীরবে থাকিয়া কহিল, “আর কোনো কন্যাকে আমার পত্নীরূপে গ্রহণ করা অন্যায় হইবে।”

 ব্রজমোহন কহিলেন, “না-করা তোমার পক্ষে আরো বেশি অন্যায় হইতে পারে।”

 রমেশ আর কিছু বলিতে পারিল না। সে ভাবিতে লাগিল, ইতিমধ্যে দৈবক্রমে সমস্ত ফাঁসিয়া যাইতে পারে।

 রমেশের বিবাহের যে দিন স্থির হইয়াছিল, তাহার পরে এক বৎসর অকাল ছিল– সে ভাবিয়াছিল, কোনোক্রমে সেই দিনটা পার হইয়া তাহার এক বৎসর মেয়াদ বাড়িয়া যাইবে।

 কন্যার বাড়ি নদীপথ দিয়া যাইতে হইবে– নিতান্ত কাছে নহে– ছোটো বড়ো দুটো-তিনটে নদী উত্তীর্ণ হইতে তিন-চার দিন লাগিবার কথা। ব্রজমোহন দৈবের জন্য যথেষ্ট পথ ছাড়িয়া দিয়া এক সপ্তাহ পূর্বে শুভদিনে যাত্রা করিলেন।

 বরাবর বাতাস অনুকূল ছিল। শিমুলঘাটায় পৌঁছিতে পুরা তিন দিনও লাগিল না। বিবাহের এখনো চার দিন দেরি আছে।

 ব্রজমোহনবাবুর দু-চার দিন আগে আসিবারই ইচ্ছা ছিল।

১১