পাতা:পঞ্চভূত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

পল্লিগ্রামে

 আমি যে ক্ষুদ্র নদীটিতে নৌকা লইয়া আছি ইহাতে স্রোত নাই বলিলেও হয়, সেই জন্য এই নদী কুমুদে কহলারে পদ্মে শৈবালে সমাচ্ছন্ন হইয়া আছে। সেইরূপ একটা স্থায়িত্বের অবলম্বন না পাইলে ভাবসৌন্দর্যও গভীর ভাবে বদ্ধমূল হইয়া আপনাকে বিকশিত করিবার অবসর পায় না।

 প্রাচীন যুরোপ নব্য আমেরিকার প্রধান অভাব অনুভব করে সেই ভাবের। তাহার ঔজ্জ্বল্য আছে, চাঞ্চল্য আছে, কাঠিন্য আছে, কিন্তু ভাবের গভীরতা নাই। সে বড়োই বেশিমাত্রায় নূতন, তাহাতে ভাব জন্মাইবার সময় পায় নাই। এখনো সে সভ্যতা মানুষের সহিত মিশ্রিত হইয়া গিয়া মানুষের হৃদয়ের দ্বারা অনুরঞ্জিত হইয়া উঠে নাই। সত্য মিথ্যা বলিতে পারি না, এইরূপ তো শুনা যায় এবং আমেরিকার প্রকৃত সাহিত্যের বিরলতায় এইরূপ অনুমান করাও যাইতে পারে। প্রাচীন যুরোপের ছিদ্রে ছিদ্রে কোণে কোণে অনেক শ্যামল পুরাতন ভাব অঙ্কুরিত হইয়া তাহাকে বিচিত্র লাবণ্যে মণ্ডিত করিয়াছে, আমেরিকার সেই লাবণ্যটি নাই। বহু স্মৃতি জনপ্রবাদ বিশ্বাস ও সংস্কারের দ্বারা এখনো তাহাতে মানবজীবনের রঙ ধরিয়া যায় নাই।

 আমার এই চাষাদের মুখে অন্তঃপ্রকৃতির সেই রঙ ধরিয়া গেছে। সারল্যের সেই পুরাতন শ্রীটুকু সকলকে দেখাইবার জন্য আমার বড়ো একটি আকাঙ্ক্ষা হইতেছে। কিন্তু সেই শ্রী এতই সুকুমার যে, কেহ যদি বলেন ‘দেখিলাম না’ এবং কেহ যদি হাস্য করেন তবে তাহা নির্দেশ করিয়া দেওয়া আমার ক্ষমতার অতীত।

 এই খবরের কাগজের টুকরাগুলা পড়িতেছি আর আমার মনে হইতেছে যে, বাইবেলে লেখা আছে, যে নম্র সেই পৃথিবীর অধিকার প্রাপ্ত হইবে। আমি যে নম্রতাটুকু এখানে দেখিতেছি ইহার একটি স্বর্গীয় অধিকার আছে। পৃথিবীতে সৌন্দর্যের অপেক্ষা নম্র আর কিছু

৪৭