মনুষ্য
জীবন নির্দেশ করিয়া দেয়। মানুষের কথাবার্তা চরিত্রের মধ্যে কাঁচা রঙটুকু, অসমাপ্তির কোমলতা-দুর্বলতাটুকু না রাখিয়া দিলে তাহাকে একেবারে সাঙ্গ করিয়া ছোটো করিয়া ফেলা হয়। তাহার অনন্ত পর্বের পালা একেবারে সূচীপত্রেই সারিয়া দেওয়া হয়।”
সমীর কহিল, ‘মানুষের ব্যক্ত করিবার ক্ষমতা অতিশয় অল্প; এই জন্য প্রকাশের সঙ্গে নির্দেশ, ভাষার সঙ্গে ভঙ্গী, ভাবের সহিত ভাবনা যোগ করিয়া দিতে হয়— কেবল রথ নহে, রথের মধ্যে তাহার গতি সঞ্চারিত করিয়া দিতে হয়। যদি একটা মানুষকে উপস্থিত কর তাহাকে খাড়া দাঁড় করাইয়া কতকগুলি কলে-ছাঁটা কথা কহাইয়া গেলেই হইবে না; তাহাকে চালাইতে হইবে, তাহাকে স্থানপরিবর্তন করাইতে হইবে, তাহার অত্যন্ত বৃহত্ত্ব বুঝাইবার জন্য তাহাকে অসমাপ্ত ভাবেই দেখাইতে হইবে।’
আমি কহিলাম, ‘সেইটাই তো কঠিন। কথা শেষ করিয়া বুঝাইতে হইবে এখনো শেষ হয় নাই, কথার মধ্যে সেই উদ্যত ভঙ্গিটি দেওয়া বিষম ব্যাপার।’
স্রোতস্বিনী কহিল, ‘এই জন্যই সাহিত্যে বহুকাল ধরিয়া একটা তর্ক চলিয়া আসিতেছে যে, বলিবার বিষয়টা বেশি না বলিবার ভঙ্গিটা বেশি। আমি এ কথাটা লইয়া অনেক বার ভাবিয়াছি, ভালো বুঝিতে পারি না। আমার মনে হয়, তর্কের খেয়াল অনুসারে যখন যেটাকে প্রাধান্য দেওয়া যায়, তখন সেইটাই প্রধান হইয়া উঠে।’
ব্যোম মাথাটা কড়িকাঠের দিকে তুলিয়া বলিতে লাগিল, ‘সাহিত্যে বিষয়টা শ্রেষ্ঠ না ভঙ্গিটা শ্রেষ্ঠ, ইহা বিচার করিতে হইলে আমি দেখি কোন্টা অধিক রহস্যময়। বিষয়টা দেহ, ভঙ্গিটা জীবন। দেহটা বর্তমানেই সমাপ্ত; জীবনটা একটা চঞ্চল অসমাপ্তি তাহার সঙ্গে লাগিয়া আছে,
৫৭