পাতা:পথের সঞ্চয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পথের সঞ্চয়

ইহারা লেশমাত্র অসুবিধাকেও মানিয়া লইতে চায় না, এতবড়ো একটা সমুদ্রে পাড়ি— নাহয় আহারবিহারে কিছু টানাটানিই হইল, নাহয় মোটামুটি রকমেই কাজ সারিয়া লওয়া গেল। কিন্তু তা নয়; ইহারা কোনো ওজরকেই ওজর বলিয়া গণ্য করিবে না; ইহারা সকল অবস্থাতেই আপনার সকল রকমের দাবিকে সর্বোচ্চ সীমায় টানিয়া রাখিতে চায়। তাহার ফল হয় যে, অবশেষে সেই অসম্ভব দাবিও মেটে। দাবি করিবার সাহস যাহাদের নাই তাহারাই কোনোমতে অভাবের সঙ্গে আপোষ করিয়া দিন কাটায়— তাহারাই বলে, অর্ধং ত্যজতি পণ্ডিতঃ। তাহাতে হয় এই যে, সেই অর্ধের মধ্য হইতেও কেবলই অর্ধ বাদ পড়িয়া যায় এবং পণ্ডিত আপনার পাণ্ডিত্যের মধ্যেই ক্রমাগত পণ্ড হইতে থাকেন।

 কিন্তু, সমস্ত সুবিধাই লইব, এ দাবি করিয়া বসিয়া কী প্রকাণ্ড ভার বহন করিতে হয়! প্রত্যেক সামান্য আরামের ব্যবস্থা কত মস্ত জায়গা জুড়িয়া বসে! এই ভার বহন করিবার শক্তি ইহাদের আছে, সেখানে ইহারা কিছুমাত্র কুণ্ঠিত নহে। এই উপলক্ষ্যে আমার মনে পড়ে আমাদের বিদ্যালয়ের ব্যবস্থা। সেখানেও দুশো লোকের জন্য চার বেলাকার খাওয়া জোগাড় করিতে হয়। কিন্তু প্রয়াসের সীমা নাই, ভোর চারটে হইতে রাত্রি একটা পর্যন্ত হাঁকডাকের অবধি দেখি না। অথচ, ইহার মধ্যে নিতান্ত প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিছু নাই বলিলেও হয়। আয়োজনের ভার যথাসাধ্য কম করা গিয়াছে, কিন্তু আবর্জনার ভার কিছুমাত্র কমে না! গোলমাল বাড়িয়া চলে, ময়লা জমিতে থাকে— ভাতের ফেন, তরকারির খোসা এবং উচ্ছিষ্টাবশেষ লইয়া কী করা যায় তাহা ভাবিয়া পাওয়া যায় না। ক্রমে

88