পাতা:পাষাণের কথা.djvu/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

পাষাণের কথা

নাগরিকগণ পদব্রজে, দলে দলে, নব খোদিত চিত্রাবলী দেখিতে আসিতেন। তাঁহাদিগের সহিত মিশ্র ভাষায় শিল্পিগণের কথোপকথন হইত, তাহা হইতে যাহা জানিতে পারিতেছি তাহাই বলিয়া যাইতেছি;—

 নাগরিকগণ বলিতেন যে, পারসিক-সমাগমের পূর্ব্বে এতদ্দেশে মন্দির বা স্তূপ নির্ম্মাণের প্রথা বা আবশ্যকতা ছিল না, কারণ ভারতীয় প্রথা অনুসারে দেবার্চ্চনার জন্য মন্দির বা স্তূপের প্রয়োজন হইত না। ব্রাহ্মণগণ পর্ব্বতে, বনে বা নদীতীর্থে যাজন করিতেন, উন্মুক্ত আকাশই তাঁহাদিগের মন্দির ছিল। যখন কপিশা হইতে বাহ্লীক ও উদ্যান পর্য্যন্ত সমগ্র ভূমি পারসিক জাতির পদানত হইয়াছিল, তখন তাহাদিগেরই চেষ্টায় এতদ্দেশে দেবায়তন নির্ম্মাণ আরব্ধ হয়। তখন হইতে মূলস্থানপুরে মিত্র দেবের মন্দির, বরুণ পর্ব্বতে চন্দ্রের মন্দির প্রভৃতি নির্ম্মিত হইতে লাগিল। অবশ্য ইহার বহুপূর্ব্ব হইতেই এতদ্দেশে তক্ষণ-শিল্প বহুলভাবে প্রচলিত ছিল, তবে ভাস্করগণ আপনাদের শিল্পচাতুর্য্য প্রাচীর, স্তম্ভ, দুর্গপ্রাকার প্রভৃতির শোভাসংবর্দ্ধনে নিযুক্ত করিতেন। অদ্যাপি সেই প্রাচীন ভারতীয় ভাস্কর্য্যপ্রথা স্তূপ ও মন্দিরবেষ্টন-শোভনকালে ব্যবহৃত হইয়া থাকে। পারসিকেরা বভেরু বা বাবিরুষ ও নানাদেশীয় শিল্প এতদ্দেশে আনয়ন করেন। কিন্তু ভারতীয় ভাস্করগণ কখনই অবিমিশ্রভাবে বিদেশীয় ভাস্কর্য্য অবলম্বন করেন নাই। যখন ভারতবাসীকে বিদেশীয় জাতির নিকট নতশির হইতে হইয়াছে তখনই বিদেশীয়গণ বর্ব্বর হইলে পদানত জাতির অধীনতা স্বীকার করিয়াছে, কিন্তু সভ্য ও শিক্ষিত হইলে উভয় জাতির মধ্যে শিক্ষার আদান প্রদান চলিয়াছে। যবনগণ ইহার উত্তরে কহিতেন যে, তাঁহারা পাষাণে মনুষ্যাকৃতি যথাযথ খোদিত করিতে পারেন। এই শিল্প তাঁহারা মিজ্রাইম্‌ দেশ হইতে প্রাপ্ত হইয়াছেন। ইহার

২৬