পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (তৃতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

• ባb” পূর্ববঙ্গ গীতিকা হইতে কিছু উত্তরপূর্বে ভয়াবহ কাউখালির পাক নামক যে ঘূর্ণবৰ্ত্তশীলা স্রোতস্বিনী বিদ্যমান, ইহাতেই আমির সওদাগর ঝাঁপাইয়া পড়িয়াছিলেন । কাব্য-বর্ণিত শ্ৰীমাই, শঙ্খ ও কাইচ প্ৰভৃতি নদী চট্টগ্রামের সর্বত্র সুপরিচিত। আমির সওদাগর প্রেমের পথে ফকির হইয়া ধনরত্ন, জরীর টুপি, রেশমী লুঙ্গী, বাড়ীঘর প্রভৃতি পরিত্যাগ করিয়া চট্টগ্রামের এই বিচিত্র প্ৰাকৃতিক দৃশ্য-শোভিত পথে পথে ঘুরিয়া বেড়াইয়াছিলেন। তঁহার পরিধানে একখানা এঠো ধুতি এবং মাথায় ছেড়া টুপি। এই অবস্থায় তিনি কাউখালি, কাইচা ও শ্ৰীমাই প্ৰভৃতি নদী-নালা উত্তীর্ণ হইয়া টোনাবারুইএর নিকট আত্মসমপণ করিয়াছিলেন । টোনাবারুই যখন সারেঙ্গ বাজাইত তখন “বনের বাঘ বশ হয়, কঁাদয় হরিণী । সাপে মাথা নোয়াই থাকে এমনি সে গুণী ॥” (১৪, ২৭-২৮) এই পালাগানের সর্বত্র সরলতা বিদ্যমান। পালারচক যে পরিহাস-রসিকতার পরিচয় দিয়াছেন তাহাও বর্বরতা নহে । যখন ভেলুয়া তঁহার দাসীকে আদেশ করিলেন, “যে সওদাগর আমার কবুতরের প্রাণ নষ্ট করিয়াছে তাহার আঙ্গুলগুলি কাটিয়া লইয়া আইস,” তখন দাসী ঘরে উকি মারিয়া শুনিল যে সেই কবুতর-ঘাতক তরুণ সওদাগরের সঙ্গে ভেলুয়ার বিবাহের কথাবাৰ্ত্তা চলিতেছে । তখন সে ভেলুয়াকে জানাইল যে সে খুব ভাল করিয়া লক্ষ্য করিয়া দেখিয়াছে, ভগবান সওদাগরের হাতে আঙ্গুল দিতে ভুলিয়া গিয়াছেন। (৬ষ্ঠ সর্গ, ছাত্র ১-৩২) । কাজি মুনাপ ও টোেনাবারুইএর বর্ণনায় কবি বেশ ক্ষমতার পরিচয় দিয়াছেন। ভেলুয়া তাহার স্বামীকে নিজের বাজু, সঙ্গুেশ্বরী হার, হাসুলি, কঙ্কণ, সোনার দানা ও ক্যানের ফুল বিক্রয় করিয়া খাওয়াইবেল, তথাপি প্রবাসে যাইতে দিবেন না। এই কাতরোক্তি কারুণ্যপূর্ণ। আমরা “মলুয়া”তে এইরূপ একটি করুণরসাত্মক চিত্ৰ পাইয়াছি । ( ১ম খণ্ড, দ্বিতীয় সংখ্যা, ৭৫ পূঃ) আর একটি বর্ণনায় উল্লিখিত আছে যে ভেলুয়া তাহার স্বামীর মৃত্যু-সম্বন্ধে ভোলা সওদাগর কর্তৃক মিথ্যা রটনা শুনিয়া দৃঢ় স্বরে বলিতেছেন, “আমার স্বামী কখনও মরেন নি। যদি তাঁহাই হইত। তাহা হইলে আমার কপালের সিন্দূর স্নান হইত এবং আমার হৃদয় অব্যক্ত ব্যথায় স্পন্দিত হইত।” এই উক্তিগুলি আমরা দ্বিতীয়