পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (তৃতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হইয়াছে। এই খেদায় ৪৫টি হাতী ধৃত হয়। তাহার প্রায় সমস্তই মৈমনসিংহের জমিদার মহারাজ সূৰ্য্যকান্ত চল্লিশ হাজার টাকা মূল্যে ক্রয় করেন। পাঁচ বৎসর অতীত হইল। এই হাতী-শিকারী আছি মিঞা ৬০ বৎসর বয়সে পরলোক-গমন করিয়াছেন । আমাদের বর্তমান খেদার পালায় যে কাহিনী বৰ্ণিত হইয়াছে তাহা পূর্বোক্ত মকবুলের রচিত গানের বহু পূর্ববৰ্ত্তী ঘটনা এবং ইহা এই প্ৰথম প্ৰকাশিত হইল । কে ইহা রচনা করিয়াছেন তাহা জানা যায় নাই। শ্ৰীযুক্ত আশুতোষ চৌধুরী চট্টগ্রামের দুৰ্গম পার্বত্য প্রদেশ পৰ্যটন পূর্বক অতিকষ্টে বহু কৃষকের মুখ হইতে এই পালাটি সংগ্ৰহ করিয়াছেন। আছি মিঞার পিতা গোলাবদনের শিকার-কাহিনী সংবলিত বৰ্ত্তমান পালাটি শত বৎসর পূর্বে বিরচিত হইয়াছিল বলিয়া মনে হয়। এই পালার ভাষা গ্ৰাম্যতার দ্বারা জটিল হইলেও অতি উপাদেয়। বস্তুতঃ ইহার মধ্যে প্ৰাকৃত ভাষার যতটা নিদর্শন পাওয়া যায় অন্য কোন বাঙ্গালা পুস্তকে তদ্রুপ প্রাকৃত-বহুলতা বিরল। মুসলমান কবির রচিত হইলেও ইহার মধ্যে উর্দু, কি ফাশীর অনাহূত দৌরাত্ম্য নাই। বিচিত্ৰভাবে উত্তেজনামূলক এই শিকার-কাহিনীটি খুব দ্রুত এবং কৌতুকাবহ ছন্দে রচিত হইয়াছে । ইহা এত স্বাভাবিক যে আমরা যেন এই ছন্দের তালে তালে দুৰ্গম পার্বত্য অঞ্চলে হস্তীর পদক্ষেপ, ঝরণায় জলপান, শিকারীদের বিকট চীৎকার ও অস্ত্রশস্ত্রের ঝনঝন শব্দ শুনিতে পাই । এই পালা-গানের রস জীবন্ত এবং একান্ত চিত্তাকর্ষক । চাষীদের ভাষায় যে কতটা জোর আছে এবং তাহারা সহজসৌন্দৰ্য্য ও কবিত্ব আয়ত্ত করিতে যে কতদূর পটু তাহা এই পালা-গানটি পড়িলেই পাঠক বুঝিতে পরিবেন। পরিশেষে বক্তব্য, আশুবাবু এই পালা-গানটি সংগ্ৰহ করিতে পার্বত্য অঞ্চলের প্রত্যেক খেদাকেন্দ্ৰ স্বয়ং পরিদর্শন করিয়াছেন । তিনি অক্লান্ত অধ্যবসায়ের সহিত পরিশ্রম করিয়া পালাটি সংগ্ৰহ করিয়াছেন, এইজন্য আমরা তঁহাকে অশেষ ধন্যবাদ প্ৰদান করিতেছি। গত এপ্রিল মাসে তাহার নিকট হইতে আমি পালাটি পাইয়াছি। এই ভূমিকার কতক কতক বিবরণও আশুবাবুর সংগৃহীত নোট হইতে গ্ৰহণ করা হইয়াছে।