পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (তৃতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভূমিকা 88ዓ কীৰ্ত্তনে তাহার প্রত্যাশা করিবেন না । কবির সারল্য ও অকপট ভক্তিই এই কবিতাগুলির প্রাণ। পল্লীর প্রান্তে যে সকল ফুল অনাড়ম্বরে ফুটিয়া থাকে, তাহ পদ্ম ও নহে, গোলাপও নহে, অথচ তাহাদের স্বাভাবিক আকর্ষণী-শক্তির অভাব নাই ; গোপিনী-কীৰ্ত্তন তাহদের মতই একটি । অতি অল্পসময়ের মধ্যেই সুলার নাম মৈমনসিংহ জেলার সর্বত্র প্রচারিত হইয়া গেল। এই জেলা নীি ব্ৰাহ্মণ জমিদারদের আবাসভূমি। তঁহাদের সমস্ত পার্বণ ও উৎসবে সুলা আহূত হইত। যে আসরে সুলা নাই, সে আসার জমিত না । অতি অল্প সময়ের মধ্যেই সুলা প্রচুর অর্থলাভ করিয়াছিল। প্রতিটি পালাগানের জন্য এক রাত্রে সুলা দশ হইতে পাঁচিশ টাকা পৰ্য্যন্ত পারিশ্রমিক পাইত । ইহা ছাড়া সমৃদ্ধ ঘরের মহিলারা সুলাকে মুক্তহস্তে বহুমূল্য বস্ত্র ও অলঙ্কারাদি দান করিতেন । ঘাগুরার রাণী সুলাকে ছত্রশাল গ্রামে অনেক নিষ্কর জমি প্ৰদান করিয়া ছিলেন । সম্ভবতঃ ১৮৬৬ খৃষ্টাব্দে, বৃদ্ধিবয়সে সুলার ভাবলীলার অবসান হয়। বিদেশীয় পাঠকেরা ইহার কবিতার মূল্য কতটা দিবেন তাহা জানি না। সুলা নিজে স্বধৰ্ম্মে নিষ্ঠাবতী ছিল এবং তাহার কবিতা হিন্দুদের চিরন্তন সংস্কারের বিশেষরূপ অনুকূল। অপরের পক্ষে তাহা কতটা উপযোগী হইবে তাহা বলা যায় না । ইংরাজি কবি মিসেস হিমান্সের লেখায় যেরূপ অনাড়ম্বর সরলা দৃষ্ট হয়, সুলা গায়েনের কবিতাতেও সেইরূপ একটা সরলতা আছে। সে স্বীয় বিশ্বাসের উন্মাদনায় যখন নিজের গানগুলি গাহিত তখন তাহা শ্রোতৃবর্গের যেরূপ হৃদয়গ্ৰাহী হইত, এখন কবিতা হিসাবে পাঠ করিয়া আমাদের পক্ষে ততটা আনন্দলাভ করা সম্ভব নয়। তথাপি ইহাদের একটা নিবিড় ভক্তিপূর্ণ উচ্ছস আছে, যাহা পাঠকের হৃদয়কে স্পর্শ করিবেই করিবে। আমরা শিক্ষার অভিমানে আমাদের হৃদয় যতই অর্গলবদ্ধ করিয়া রাখি না কেন, কৃষ্ণলীলার মাধুৰ্য্য তাহাতে প্ৰবেশ করিবার অধ্যকাশ করিয়া লইবে । র্যাহারা খৃষ্টধৰ্ম্মে বিশ্বাসী তাহারা এই কীৰ্ত্তনগুলির মধ্যে বাইবেলের একটা সাদৃশ্য অনুভব করিবেন। श्रृंौन এবং কৃষ্ণসম্বন্ধীয় লীলার স্থানে স্থানে একটা অজ্ঞাত সাম্য ও ঐক্যরেখার পরিচয় পাওয়া যায়। আমরা বাইবেলের স্তোত্রগুলির (Psalms) ২৫, ১১ ; ৩১, ৩ ;