মা উদাসীন ভাবে কহিলেন, “বউয়ের কী করবে।”
অপূর্ব কহিল, “বউ এখানেই থাক্।”
মা কহিলেন, “না বাপু, কাজ নাই; তুমি তাকে তোমার সঙ্গে নিয়ে যাও।” সচরাচর মা অপূর্বকে ‘তুই’ সম্ভাষণ করিয়া থাকেন।
অপূর্ব অভিমানক্ষুণ্নস্বরে কহিল, “আচ্ছা।”
কলিকাতা যাইবার আয়োজন পড়িয়া গেল। যাইবার আগের রাত্রে অপূর্ব বিছানায় আসিয়া দেখিল মৃন্ময়ী কাঁদিতেছে।
হঠাৎ তার মনে আঘাত লাগিল। বিষণ্ণকণ্ঠে কহিল, “মৃন্ময়ী, আমার সঙ্গে কলকাতায় যেতে তোমার ইচ্ছে করছে না?”
মৃন্ময়ী কহিল, “না।”
অপূর্ব জিজ্ঞাসা করিল, “তুমি আমাকে ভালোবাস না?” এ প্রশ্নের কোনো উত্তর পাইল না। অনেক সময় এই প্রশ্নটির উত্তর অতিশয় সহজ কিন্তু আবার এক-এক সময় ইহার মধ্যে মনস্তত্ত্বঘটিত এত জটিলতার সংস্রব থাকে যে, বালিকার নিকট হইতে তাহার উত্তর প্রত্যাশা করা যায় না।
অপূর্ব প্রশ্ন করিল, “রাখালকে ছেড়ে যেতে তোমার মন কেমন করছে?”
মৃন্ময়ী অনায়াসে উত্তর করিল, “হাঁ।”
বালক রাখালের প্রতি এই বি. এ.-পরীক্ষোত্তীর্ণ কৃতবিদ্য যুবকের সূচির মতো অতি সূক্ষ্ম অথচ অতি সুতীক্ষ্ণ ঈর্ষার উদয় হইল। কহিল, “আমি অনেককাল আর বাড়ি আসতে পাব না।” এই সংবাদ সম্বন্ধে মৃন্ময়ীর কোনো বক্তব্য ছিল না।
“বোধ হয় দু বৎসর কিম্বা তারও বেশি হতে পারে।”
মৃন্ময়ী আদেশ করিল, “তুমি ফিরে আসবার সময় রাখালের জন্যে একটা তিনমুখো রজাসের ছুরি কিনে নিয়ে এসো।”
অপূর্ব শয়ান অবস্থা হইতে ঈষৎ উত্থিত হইয়া কহিল, “তুমি তা হলে এইখানেই থাকবে?”