পাতা:প্রবাসী (অষ্টবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૧૪૭ প্রবাসী—আশ্বিন, ১৩৩৫ [ ২৮শ ভাগ, ১ম খণ্ড লাবণ্য-পুরাবৃত্ত লাবণ্যের বাপ অবনীশ দত্ত এক পশ্চিমী কলেজের অধ্যক্ষ। মাতৃহীন মেয়েকে এমন ক’রে মানুষ করেচেন যে, বহু পরীক্ষা পাশের .ঘৰাঘষিতেও তার বিদ্যাবুদ্ধিতে লোকসান ঘটাতে পারেনি । এমন কি, এখনো তার পাঠাকুরাগ রয়েচে প্রবল। বাপের এক মাত্র সখ ছিল বিদ্যায়, মেয়েটির মধ্যে তার সেই সখটির সম্পূর্ণ পরিতৃপ্তি হয়েছিল। নিজের লাইব্রেরির চেয়েও তাকে ভালোবাসতেন। তার বিশ্বাস ছিল জ্ঞানের চর্চায় যার মনটা নিরেট হ’য়ে ওঠে, সেখানে উড়ো ভাবনার গ্যাস নীচে থেকে ঠেলে ওঠ বার মতো সমস্ত ফাটল ম’রে যায়, সে-মাহুষের পক্ষে বিয়ে করবার দরকার হয় না। তার দৃঢ় বিশ্বাস যে, তার মেয়ের মনে স্বামী সেবা আবাদের যোগ্য যে নরম জমিটুকু বাকি থাকৃতে পাৰ্বত সেট গণিতে ইতিহাসে সিমেন্ট করে শাখা হয়েছে-খুব মজবুং পাকা মন যাকে বলা যেতে পারে-বাইরে থেকে আঁচড় লাগলে দাগ পড়ে না। তিনি এতদূর পর্য্যস্ত ভেবে রেখেছিলেন যে, লাবণ্যর নাইবা হোলো বিয়ে, পাণ্ডিত্যের সঙ্গেই চিরদিন নয় গাঠবাধা হয়ে থাকুল। তার আর একটি দেহের পাত্র ছিল। তার নাম শোভনলাল। অল্প বয়সে পড়ার প্রতি এত মনোযোগ আর কারো দেখা যায় না। প্রশস্ত কপালে, চোখের ভাবের স্বচ্ছতায়, ঠোটের ভাবের সৌজন্তে, হাসির ভাবের সরলতায়, মুখের ভাবের সোঁকুমার্য্যে তার চেহারাটি দেখ বামাত্র মনকে টানে। মানুষটি নেহাৎ মুখচোর, তার প্রতি একটু মনোযোগ দিলে ব্যস্ত হ’য়ে পড়ে। গরীবের ছেলে, ছাত্রবৃত্তির সোপানে সোপানে দুর্গম পরীক্ষার শিখরে শিখরে উত্তীর্ণ হ’য়ে চলেচে । ভবিষ্যতে শোভন যে নাম করতে পারবে, আর সেই খ্যাতি গ’ড়ে তোলবার প্রধান কারিগরদের ফর্দে অবলীশের নামটা সকলের উপরে থাকৃবে এই গৰ্ব্ব অধ্যাপকের মনে ছিল। শোভন আসত তার বাড়িতে পড়া নিতে, তার লাইব্রেরিতে ছিল তার অবাধ সঞ্চরণ। লাবণ্যকে দেখলে সে সঙ্কোচে নত হ’য়ে যেত। এই সঙ্কোচের অতিদুরত্ববশত শোভনলালের চেয়ে নিজের মাপটকে বড়ো ক’রে দেখতে লাবণ্যর বাধা ছিল না। দ্বিধা ক’রে নিজেকে যে-পুরুষ যথেষ্ট জোরের সঙ্গে প্রত্যক্ষ না করায় মেয়েরা তাকে যথেষ্ট স্পষ্ট ক’রে প্রত্যক্ষ করে না । এমন সময় একদিন শোভনলালের বাপ ননিগোপাল অবনীশের বাড়িতে চড়াও হ’য়ে তাকে খুব একচোট গাল পেড়ে গেল। নালিশ এই যে, অবনীশ নিজের ঘরে অধ্যাপনার ছুতোয় বিবাহের ছেলেধরা ফঁাদ পেতেছেন, বৈদ্যর ছেলে শোভনলালের জাত মেরে সমাজ-সংস্কারের সখ মেটাতে চান। এই অভিযোগের প্রমাণ স্বরূপে পেন্সিলে আঁকা লাবণ্যতার এক ছবি দাখিল করলে। ছবিটা আবিষ্কৃত হয়েছে শোভনলালের টিনের প্যাটুরীর ভিতর থেকে, গোলাপফুলের পাপড়ি দিয়ে আচ্ছন্ন। ননিগোপালের সন্দেহ ছিল না, এই ছবিটি লাবণ্যেরই প্রণয়ের দান। পাত্র হিসাবে শোভনলালের বাজার দর যে কত বেশি, এবং আর কিছু দিন সবুর ক’রে থাকুলে সে দাম যে কত বেড়ে যাবে ননিগোপালের হিসাবী বুদ্ধিতে সেটা কড়ার-গণ্ডায় মেলানো ছিল। এমন মুল্যবান জিনিষকে অবনীশ