পাতা:প্রবাসী (একত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যোধপুর ঐশান্ত দেবী শেষ রাত্রে সাড়ে তিনটায় জয়পুরের ওয়েষ্ট্রং-রুম হক্টস্তে শীতে কাপিতে কঁাপিতে ফুলের জংশনের ট্রেন ধরিতে ছুটিলাম । ফুলেরা হইতেই ধোদপুরের ট্রেন ধরিতে হইবে। গাড়া ভৰ্ত্তি মানুষ মোট মোট লেপে আপাদমস্তক মুড়ি দিয়া ঘুমাইতেছে, নাকের ডগ! কি চলের টকিও দেখা যায় না। আমর। তাহাদের পায়ের তলায় বসিয়া কোনো প্রকারে পথ কাটাইয় দিলাম। ফুলের মস্ত ষ্টেশন, কিন্তু এখানকার জলের ব্যবস্থা অতি অপরূপ । সকাল আটটার সময় মুখ ধুইতে গিয়া দাতে মাজন ঘসিয়া দেখি, প্রথম শ্রেণীর স্নানাগারে বড় বড় স্নানের টব, মুগ ধোবার গামলা, তিন চারটা করিয়! জলের ট্যাপ , কিন্তু কোথাও এক ফোটা জল নাই। কেহ এক বিন্দু জল ধরিয়াও রাখে না। রুমালে মুগ মুছিয়া অগতা বাহির হইতে হইল। বাহিরে আসিয়া দেখিলাম সারি সারি মান্তম দাতন, ঘটী, আধমাজ বাসন লইয়৷ প্লাটফরম ছড়িয়া বসিয়া আছে, কিন্তু সিকি মাইল জোড় ষ্টেশনে কোথাও জল মিলিতেছে না। যাহার নিতাস্তু প্রয়োজন, সে ঘট হাতে করিয়া ষ্টেশনের এক প্রান্ত হইতে আর এক প্রান্ত পর্যাম্ভ ছুট-ছুটি করিতেছে, কিন্তু ফুলেরায় ট্রেন ছাড়িবার আগের মুহূৰ্ব পর্য্যস্ত দেখিলাম তাহার ঘটা যেমন শূন্য ছিল তেমনই শূন্ত আছে। মরুভূমি বটে । ফুলেরায় আমাদের গাড়ীতে জয়পুরের রাণীর কোষাগারের এক কৰ্ম্মচারী উঠিলেন। মানুষটি ইংরেজী জানেন না, হিন্দীতেই কথাবাৰ্ত্তা বলেন। রাজকুমারের জন্মদিন উপলক্ষে যোধপুর হইতে মাতুলালয়ের যেসকল নিমন্ত্রিতর আসিয়াছিলেন, র্তাহাদের বাড়ি পৌছাইয়া দিবার সৌজন্যের জন্ত ইনি যোধপুর যাইতেছিলেন । জয়পুর ও যোধপুর সংক্রান্ত অনেক খবর ইহার নিকট হইতে পাওয়া গেল। ষোধপুরে জয়পুরের রাজার খণ্ডরবাড়ি । রাণীর অলঙ্কার তৈয়ারী ও রক্ষণাবেক্ষণ যে করে, তাহারই কাজ রাণীর টাকাকড়ির হিসাব রাখা । জন্মোৎসবের পর ইহার চলিয়াছে যোধপুরে। , ইহার সহিত তৃতীয় শ্রেণীতে যে-সব ভৃত্যবৰ্গ আছে আহারের সময় কৰ্ম্মচারীটি তাহদেরই গাড়ীতে গিয়া পাওয়া-দাওয়া করিলেন। আমাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “বাঈ সাহেবের” খাওয়া-দাওয়া হইয়াছে কি না। - ফুলের হইতে কিছু দূরে সম্বর ষ্টেশন। গাড়ী থামিতেই চোখে পড়িল সাদা পাথর না চুনের উচ্চ বাধ । প্রথমে বুঝিতে পারি নাই ; তাহার পর ষ্টেশনের নাম চোখে পড়িতেই বুঝিলাম লবণের বাধ। দূরে হ্রদের চারিধারে বিস্তীর্ণ বালুচর, তাহার দুই দিক পাহাড় দিয়া ঘেরা, মাঝখানে বিরাট লবণ-হ্রদ। হ্রদের পাশ দিয়া নিকটবৰ্ত্তী গ্রামের মেয়ের কলসী মাথায় সারি বাধিয়া কোথায় চলিয়াছিল। পাহাড় ও হ্রদের পটভূমিতে যেন ছবি অঁাক। গ্রামে বিবাহ হইয়াছিল। খোলা গরুর গাড়ী করিয়া গ্রাম্য: বর বধূ শাশুড়ী ননদ ট্রেন ধরিতে আসিল। ক্ষুদ্রবধূর দীর্ঘ অবগুণ্ঠন। তাহাকে গাড়ী হইতে প্রায় কোলে করিয়াই নামাইল। কিশোরী সুন্দরী ননদিনী এক লাফে গাড়ীর উপর হইতে মাটিতে নামিল । তাহার পর গহনা কাপড় সমেত ষ্ট্রেশনের রেলিং এক · লাফে ডিঙ্গাইয়া ছুটয় ট্রেনে উঠিয়া হাসিতে লাগিল। : তাহার দীর্ঘ চঞ্চল নয়নযুগলের সকৌতুক সৃষ্ট ও আনন্দউচ্ছল হাসি দেখিয়া মনে হইতেছিল, এই বুঝি পুরাকালের চঞ্চলকুমারী। মণিবন্ধ হইতে কনুই পৰ্য্যস্ত হাতীর দাতের ও সোনার চুড়ি, পায়ে মল, মাথায় সোনার সিথির উপর ওড়না ; কিন্তু এত ভারেও তাহার চাঞ্চল্য ও নৃত্যশীল গতি কিছুমাত্র বাধা পায় নাই। সম্বর হ্রদের মাঝখান দিয়া রেল-লাইন চলিয়াছে। লাইনের একধারে হ্রদের জল, অন্ত ধারে আধজম, সিকিজম, রক্তাভ লবণের ঘন হ্রদ। এই অৰ্দ্ধতরল লবণের হ্রদে কত ষে রঙের খেলা তাহার ঠিক নাই ;