পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] দেশীয় পাইকদের এই একটা স্ববিধা ছিল যে, তাহারা সমবেত হইয় তাহীদের কৰ্ম্মচারীদিগকে নিৰ্ব্বাসিত বা বিতাড়িত করিতে পারিত। রাজকৰ্ম্মচারীরা মুদ্র হিসাবে কোনও বেতন পাইতেন না, তাহাদের যাবতীয় কাৰ্য্য করিবার জন্য রাজ-প্রাসাদ হইতে তাহারা নির্দিষ্টসংখ্যকু পাইক পাইতেন। ক্ষেত-চাষ সমাপ্ত করিয়া অবসর-কালে এই পাইকের রাস্ত ও পুকুর, দুর্গ-প্রাচীর নির্মাণে নিযুক্ত থাকিত ; তাই রাজ্যের আভ্যন্তরিক কাৰ্য্য অতি স্থলভে সম্পাদিত হইত। প্রত্যেক রাজ-কৰ্ম্মচারী বন্দী বা ক্রীতদাস পাইতেন । বন্দীদিগের উপর রাজার কোনরূপ আধিপত্য থাকিত ন। তাহীদের প্রভু তাহাদিগের যথেচ্ছ। বিক্রয় ব। ইস্তান্তর করিতে পারিত। এই পাইক এবং বন্দীদিগের পরিশ্রমের দ্বারাই উচ্চবংশীয় অসমীয় প্রজার ভরণপোষণ চলিত। স্বতরাং বৃটিশ-সাম্রাজ্যে যখন ক্রীতদাস প্রথা একেবারে উঠিয়া যায়, তখন সেই সন্ধান্ত বংশগণের ভরণ-পোষণ এবং মর্য্যদা-অকুসারে সমাজে চলাফের বড় মুঙ্গিল হইয় পড়িল । অসমীয় সম্বাস্ত বংশীয়দের বর্তমান দৈন্তের কারণের মধ্যে ইহাও অন্যতম । প্রজার উপকারার্থে রাজারা অনেক কাজ করিতেন । যেখানে জলের অভাব সেখানে পুষ্করিণী খনন করিয়া সেঅভাব মোচন করা হইত। খৃষ্টীয় সপ্তদশ শতাব্দীর শেষার্দ্ধে আহোম নৃপতি এবং প্রজাগণ শাক্তদীক্ষা গ্রহণ করেন ; সেই অবধি তাহার। হিন্দুধর্মের অধিকতর পৃষ্ঠপোষক হইয় পড়েন। সতী জয়মতীর পুত্র রাজা রুদ্রসিংহের সময় হিন্দু ধৰ্ম্ম গ্রহণ করেন এবং তাহার মোহস্ত গোঁসাইগণ রাজার সভায় এবং রাজ্যে বিস্তর প্রতিপত্তি লাভ করেন। রাজাও নৈষ্ঠিক শাক্ত হিন্দু হইয়া পড়েন । র্তাহার দেশের নান। স্থানে দেবালয় এবং মন্দির নির্মাণ করিয়া দেন । র্তাহারা উজ্জয়িনী, কনৌজ, নবদ্বীপ প্রভৃতি স্থান হইতে উচ্চকুলের সদব্ৰাহ্মণ এবং কায়স্থ আনিয়া এখানে বাস করান । আহোম রাজত্বের সময় নিৰ্ম্মিত অট্টালিকা এখনও আহোম রাজধানী শিবসাগর সমীপস্থ রংপুর নামক স্থানে বিরাজ করিতেছে। ভাস্কর-বিদ্যায় অসমীয়া শিল্পীর &8---à আসামে আহোম-রাজত্ব অতি স্বনিপুণ ছিল। 8፭ ዓለ আসামের সর্বত্র প্রাসাদমন্দিরাদিতে খোদিত প্রস্তরমূর্তিগুলি দেখিলে তাহার প্রমাণ পাওয়া যায় । ছয় শত বৎসর ধরিয়৷ আহোমের আসামে রাজত্ব করেন। তাহাদের রাজত্বের চিহ্ন এখনও আসামের সর্বত্র বিদ্যমান। অসমীয়ার নামের শেষে প্রায়ই আহোমরাজপ্রদত্ত উপাধি ব্যবহৃত হয় । বৰ্ত্তমানকালেও প্রজার শ্রেণীবিভাগ, গ্রামের আভ্যন্তরিক কাৰ্য্যকলাপ, রাজস্ব আদাযের নিয়ম-প্রণালী আহোম প্রণালীর উপর প্রতিষ্ঠিত ! খৃষ্টীয় সপ্তদশ শতাব্দীতেও সমস্ত আহোমপ্রজ। হিন্দুধৰ্ম্ম গ্রহণ করে নাই । তাঙ্গদের মধ্যে অনেক লোক স্বকীয় ধৰ্ম্ম পালন করিত। তাহদের দেওধাই, বাইলু, মোহন নামক নিজের পুরোহিতবৃন্দ ছিল । এই পুরোহিতের প্রাচীন আহোম ধৰ্ম্ম-গ্রন্থ পাঠ করিতেন, শাস্ত্রমতে ক্রিয়ানুষ্ঠান করিতেন, এবং আহোম ভাষায় দেশের ইতিহাস বা বুরঞ্জী লিপিতেন। আহোম জাতি পুরঞ্জীরচনা-বিদ্যায় অতীব পারদর্শী ছিল । ইহাতে রাজ্যের সমস্ত কাৰ্য্যকলাপেব বিবরণ লিপিবদ্ধ করা হুইত সেইজন্য রাজসভায় নিদিষ্ট বুরঞ্জী-লেখক কৰ্ম্মচারী থাকিতেন। পরে আসামী ভাষায় বুরঞ্জী লেখার প্রথ। প্রচলন হয় । খৃষ্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে কীৰ্ত্তিচন্দ্র বড়বডুয় নামক জনৈক কৰ্ম্মচারী স্বীয় বংশগত নীচতার প্রকাশ পাইবার ভয়ে রাজ্যের সমস্ত বুরঞ্জী দগ্ধ করিবার আদেশ প্রচার করেন, কিন্তু অনেক অসমীয়া “থাফি-র্থ।” তাহার হস্ত হইতে বুরঞ্জী গোপনে রক্ষা করেন, এবং যদিও ব্রহ্মদেশীয়দের অত্যাচারের সময় অনেক বুরঞ্জী নষ্ট হয়, তথাপি এখনও আসামে বিস্তর বুরন্ত্রী পাওয়া যায় । উপসংহারে আমার বক্তব্য এই যে, বঙ্গীয় স্বধী-সমাজ ধেন আসামের পুরাতত্ত্ব-আলোচনায় অধিকতর নিবিষ্ট হন । আসামের প্রাচীন সভ্যতা ও গৌরব-সমৃদ্ধির কাহিনী যাহাতে আরো অধিকতরভাবে বঙ্গবাসী বা ভারতবাসীর গোচরীভূত হইতে পারে, আমার বিনীত প্রার্থন। যেন তাহার। তজ্জন্য সচেষ্ট থাকেন। হুইত ।