পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রধানতম কষ্ট দৃষ্টিহীনতা নয়, অকৰ্ম্মণ্যতা—বাস্তবিক ইহা নিতান্ত সত্য। অন্ধদিগকে কাজ দিতে হুইবে ও শিথাইতে হইবে । ভারতে ১৪টি অন্ধবিদ্যালয় আছে। আজকাল দুই-চারিটি বাড়িয়াও থাকিতে পারে । কিন্তু এতবড় একট। দেশে এই কয়টি স্কুল আদে যথেষ্ট নহে । এই বঙ্গদেশে একটিমাত্র অন্ধ-বিদ্যালয় আছে, ইহা নিতান্ত দুঃখের বিষয় । বাংলায় বহুসহস্ৰ অন্ধ বালক-বালিকা আছে ; এখানে একটি বিদ্যালয় কি করিতে পারে ? সম্প্রতি অস্তুত: প্রত্যেক বিভাগে এক-একটি অন্ধ-বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত করা নিতান্ত দরকার হইয়া পড়িয়াছে এবং এইসব কাজের জন্য উৎসাঙ্গী সহৃদয় শিক্ষকের অবিশুক । আজকাল কলিকাতার স্কুলে লেখাপড়া শিক্ষণ দেওয়া নিয়মিতই হইতেছে । আর গান বাজনা ও বেতের কাজ ও শিক্ষা দেওয়া হয়। কিন্তু ইহা যথেষ্ট নহে। অন্যান্য যে-সব বিবিধ শিল্পকাৰ্য্য অন্যান্য দেশে অন্ধদিগকে শিক্ষা দেওয়া হইতেছে তাহারও অনুষ্ঠান করা দরকার এবং এইসব কার্য্য যাহাতে সুচারুরূপে সম্পন্ন হয় সে-বিষয়ে অন্ধ-বিদ্যালয় সমিতি যদি কিছু মনোযোগ দেন তাহা হইলে খুব শুনিতেছি, যে সম্প্রতি ঢাকায় একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত করিবার জন্য চেষ্টা হইতেছে। এই চেষ্টা যাহাতে বিফল না হয় তfঙ্গই আমাদের একান্ত ইচ্ছা । প্রথমে যে-ভাৱেই আরম্ভ হউক, উৎসাহী ও উদ্যোগী লোক থাকিলে ইহা ভবিষ্যতে বেশ ভাল হইবে আশা করা যায় । কিন্তু কেবল ঢাকায় একটি অন্ধ-বিদ্যালয় হইলেই হইবে না। এইরূপ স্থানে-স্থানে বিদ্যালয় স্থাপন করা দরকার। দেশের র্যাহার কৰ্ম্মী, উদ্যোগী ও অগ্রণী তাহারা যদি কেহ এবিষয়টিতে মনোযোগ দেন তাহ হইলে আমরা নিশ্চি হইতে পারি। আর র্যাঙ্গর অন্ধদের জনক-জননী, তাহারা যেন সন্তানের অন্ধমায়ায় বশীভূত না হইয়া যাহাতে তাহাদের উপকার হয় সে-বিষয়ে চেষ্টা করেন। প্রথম কথা এই ষে, ছেলেমেয়ে অন্ধ হইলেও তাহাদিগকে আত্মনির্ভর হইতে শিথাইতে হইবে । যাহাতে তাহার খাওয়া-দাওয়া প্রভৃতি দৈনিক কাৰ্য্য নিজে সম্পন্ন করিতে পারে डोव्न ट्ध्र । [ ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড সেইরূপ শিক্ষা দেওয়া কৰ্ত্তব্য। তাই আজ কি প্রকারে তাহাদের অবস্থা আমেরিক প্রভৃতি স্থানের মত করিতে পারা যায় সেই দিকে দেশের কৰ্ম্মাদিগকে কিছু যত্নবান হইতে অনুরোধ করিতেছি। সহসা কোন উন্নতি না হইলেও ভবিষ্যতে বিশেষ উন্নতি হওয়া নিতান্ত সম্ভব । আর-একটি কথা এই যে, অনেকেই মূক-বধিরবিদ্যালয় ও অন্ধ বিদ্যালয় এই দুইটিকে এক বলিয়া মনে করেন । কিন্তু বাস্তবিক এ-দুইটির পরস্পর কোন সম্পর্ক নাই । মানুষের ইন্দ্ৰিয়ই কি তাতার সর্বস্ব ? যাহার চক্ষু নাঙ্গ সে হতভাগ্য, জগতে তাহার কিছুই নাই, এইরূপ মৰ্ম্মস্পশী সহানুভূতি দেখাইয়া তাঙ্গর প্রাণ লইয়া খেলা করিবার মানুষের কি অধিকার আছে ? যাহার চক্ষু আছে সে দৃষ্টিহীনের কোথায় দুঃখ কেমন করিয়া বুঝিবে ? যখন দীর্ঘনিশ্বাসের সহিত করু৭ সম্ভাষণে চক্ষুষ্মান ব্যক্তি সহানুভূতি দেখাইয়া এজগতে দৃষ্টিহীনের স্থান নাই বুঝাইয়া দেন তখন তাঙ্গার হৃদয়ের অস্তস্তম স্থল হইতে যে একটা বেদন আসিয়া তাহার প্রাণটাকে নড়িয় চাড়িয়া ভাঙিয়া ফেলিতে চায় কেউ কি সেই দুঃখ বুঝিতে পারেন। মানুষের কোন একটি অঙ্গবিকৃতি হইলেক্ট কি তাছার জীবন ব্যর্থ ও স্বথশূন্য হইয়া যায় ? কে বলে ? প্রাণের ভিতর চাঙ্গিয়া দেখিলে কেই একথা বলিতে পারেন না। অনেক অন্ধ কত আনন্দে দিন যাপন করে দেখিয়াছি ওঁ শুনিয়াছি । আবার অন্যদিকে সমস্ত ইন্দ্রিয়ের অধিকারী হইয়াও কোন কোন ব্যক্তি নিতান্ত দুঃসঙ্গ, ভারময়, জীবন বহন করিয়া থাকেন , আর তাহারাই দৃষ্টিহীমের সামান্য দৃষ্টির অভাব দেখিয়া দুঃখ প্ৰকাশ করেন ! বাহা ইন্দ্রিয়াদির পশ্চাতে যে একটা বাস্তব অতি মূল্যবান পদার্থ আছে তাহ আমরা ভুলিয়া যাইব কেন ? যখন বঙ্কিম-বাবুর রজনী” পুস্তকখানি পাঠ করি তখন দেখিয়া বড় আনন্দ পাই ঘ, তিনি চক্ষুষ্মান হইয়াও অন্ধের প্রাণে প্রাণ মিলাইয়া তাহার প্রাণের আলোড়ন-বিলোড়ন লক্ষ্য করিয়াছেন। অন্ধের প্রাণেও কবিত্ব আছে, ভাব আছে, ভাষা আছে ; সেও প্রকৃতির , ) లిరి)