পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৭৩২ কাজ সম্পাদিত হয় ও এতদুভয়েই পূৰ্ব্বোক্তরূপ সাবধানতা, অবলম্বন করিতে হয়। প্রথম গৃহকে নাইট্রেটিং হাউস বা নাইট্রেটু করার ঘর দ্বিতীয়কে ওয়াশিং হাউস বা ধৌত করার ঘর, তৃতীয় গৃহকে শুষ্ক করার ঘর বলে। নাইট্রো-গ্নিসেরিনে লেশমাত্র অ্যাসিডও লাগিয়া থাকিলে উহ্য অকালে স্বতঃস্ফুরিত হইয়া জীবন নাশের কারণ হইয়া দাড়ায় ও এইজন্য ধৌত-কাৰ্য্য খুব উত্তমরূপ হওয়া "আবশ্যক । সীমান্য-মাত্র অসাবধানতায় কিরূপ সাংঘাতিক শাস্তি পাইতে হয়, একটি দৃষ্টান্তেই তাহা অমুমেয়। ১৯০৪ খৃষ্টাব্দের ৫ই জানুয়ারী বেলা ১০টা ৫৫ মিনিটের সময় হেল নগরের নাইট্রোগ্নিসেরিনের কারখানায় একটি কারিগরের একটু অসাবধানতায় বিস্ফোরণ হয়। দুরে দূরে অবস্থিত থাকা সত্ত্বেও মুহূৰ্ত্ত-মাত্র সময়ের মধ্যে তিনটি ঘরই ধূলি-কণায় পরিণত হয়। প্রায় ৯০ মাইল দূর হইতে বজ্রধ্বনির মত এ বিদারণ-শব্দ শোনা গিয়াছিল এবং ৪ মাইলের ভিতর প্রায় সমস্ত ঘর-বাড়ীর দরজা-জানালার কাচ চুর-মার হইয়া গিয়াছিল। নাইট্রোগ্নিসেরিনের স্বাদ বেশ মিষ্ট কিন্তু ইহা অতি বিষাক্ত । বেশী-পরিমাণে খাইলে ইহা কুচিলা-বিষের (ষ্টিকনি) ন্যায় কাৰ্য্য করে ও অচিরেই মৃত্যু ঘটায়। কিন্তু অল্প মাত্রায় সেবনে হৃদ-যন্ত্রের ক্রিয়া বেশ দ্রুত চলে। ইহা প্রায় সকল জিনিসের ভিতরেই অতি অদ্ভুতভাবে প্রবেশ ( soak ) করে। দেহের যে-কোন অংশে রাখিলে ইহা ত্বকের ভিতর প্রবেশ করিয়া রক্তের সহিত মিশে এবং তাহাতে মাথা ঘুরে ও হৃদ-যন্ত্র বিকল হয়। বারুদের তুলনায় ইহা দশগুণ ক্ষমতাশালী ; কিন্তু আশ্চর্য্যের বিষয় নাইট্রোগ্নিসেরিন অত সহজে বিদীর্ণ হয় না। এমন কি একটি প্রজলিত দীপশলাকা উহার ভিতরে নিমজ্জিত করিয়া নিৰ্ব্বাপিত করা যায়। কিন্তু অকস্মাৎ তাপ বা আঘাত পাইলেই উহা বিদীর্ণ হয়। নাইট্রোগ্নিসেরিনের একটি ধৰ্ম্ম হইতেছে ঠাণ্ডাতে ইহা জমিয়া বরফের ন্যায় শক্ত হইয়া যায় ও ইহার পরিমাণ বৰ্দ্ধিত হয়। এরূপ হওয়া অতি বিপজ্জনক, কারণ শক্ত নাইট্রোগ্নিসেরিন অতি সহজেই বিদীর্ণ হয়। প্রবাসী—অশ্বিন, ১৩৩১ ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড বস্তুতঃ হিব্রুয়ব্যাগের একজন খনিজ-পূৰ্ত্তবিদ্যা-বিশারদ মাইনিং এঞ্জিনিয়ার জমাট নাইট্রোগ্নিসেরিন টুকুর। টুকরা করিয়া ভাঙ্গিতে গিয়া প্রাণ হারায় আর-এক বার এক বাক্স নাইট্রোগ্নিসেরিন স্থানান্তরে প্রেরণের পথে এক রেল-ষ্টেশনের গুদাম-ঘরে পড়িয়া ছিল । রাত্রিতে ঠাণ্ড লাগিয়া উহা জমিয়া বরফ হুইয়া যায় ও উহার পরিমাণ বৰ্দ্ধিত হওয়ার দরুন বাক্সের ডাল। উদ্ভিন্ন করিয়া বাহির হইয়া আসে। পরদিন সেই গুদামের একটি কৰ্ম্মতৎপর বালক উহা দেখিতে পাইয়া যন্ত্রপাতি সহ বাক্সটিকে ভাল করিয়া প্যাকু করিতে লাগিয়া যায়। ফলে অচিরাং উহা বিদীর্ণ হইয়৷ সমস্ত ষ্টেশন-গৃহটিকে ভগ্নস্তুপে পরিণত করে ও প্রায় ৩০টি প্রাণীর ইহলীলা সাঙ্গ হয় । ফলতঃ এই ঘটনার পর হইতে রেল ও ষ্টিমার-কোম্পানীর মালিকগণ নাইট্রোগ্নিসেরিন লাগেজ গ্রহণ বারণ করিয়া নিষেধাজ্ঞা প্রচার করেন। এই-সকল কারণে তদানীন্তন সৰ্ব্বশ্রেষ্ঠ নাইট্রোগ্নিসেরিন প্রস্তুত-কারক স্বইডেন-দেশবাসী এম নোবেল ( M. Nobel -স্ববিখ্যাত নোবেলপ্রাইজের প্রতিষ্ঠাতা) এই ব্যবসা ছাড়িয়া দিবেন কি না ইতস্ততঃ করিতেছিলেন, এমন সময় দৈবক্রমে একটি উপায় আবিষ্কৃত হয় । বালি স্বীয় ওজনের প্রায় তিনগুণ-পরিমাণ নাইট্রোগ্নিসেরিন অনায়াসে শোষণ করিতে পারে। এই বালি-মিশ্রিত নাইট্রোগ্নিসেরিন দেশ-বিদেশে রপ্তানি করিবার পক্ষে খুব স্ববিধ। কারণ ইহা অত সহজে বিদীর্ণ হয় না, পরন্তু ইহার কার্য্যকারিত অবিমিশ্র নাইট্রোগ্নিসেরিনের চেয়ে কোন অংশে হীন নহে। সাধারণতঃ কিয়েজেলগুর (Kieselguhr)নামক একপ্রকার অতি উৎকৃষ্ট বালি দ্বারা উহা শোষণ করান হয়। ইহাকে কিয়েজেলগুর ডাইনামাইট্‌ বলে। কিন্তু অধুনা ইহা হইতেও উৎকৃষ্টতর একটি শোষক দ্রব্য আবিষ্কৃত হইয়াছে। কোলোইডিয়া (Collidion)নামক ইহার প্রস্তুতপ্রণালী পরে বিবৃত হইবে ) একপ্রকার তুলার (৭ ভাগ) সঙ্গে নাইট্রোগ্নিসেরিন (৯৩ ভাগ ) ৪০ ডিগ্রি তাপে উত্তমরূপে • মিশ্রিত করা হয়। ঠাণ্ডা করিলে ধূম্রবর্ণের যে সঙ্কোচ--- প্রসারশীল স্থিতিস্থাপক বস্তু পাওয়া যায় তাহার সহিত