পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা ] এবং আধ্যাত্মিক জীবনের আমূল পরিবর্তন হওয়া সম্ভবপর হবে । মানুষ আর তখন কারণে-অকারণে অকাজ-কুকাজ করে নিজের পাপের বোঝা বাড়াতে ইচ্ছুক হবে না। ভাইও আর তখন তুচ্ছ স্বার্থের জন্য ভাইয়ের বুকে ছুরী বিধিয়ে দিতে উদ্যত আগ্রহে ছুটে আসবে না। মাহব আবার মানুষ হবে । একদিন বাসস্তী উষার স্নিগ্ধ রক্তিম কিরণে রুদ্ধ পুলকের ফুটন্ত আবেগে জগতের সবাই আবার নতুন প্রাণে প্রাণবন্ত হয়ে জেগে উঠবে, হিংসা দ্বেষ স্বার্থপরতা নীচতা সব ভুলে গিয়ে পৃথিবীর সমস্ত লোক একান্নবৰ্ত্তী শান্তিপ্রিয় পরিবারের মতন মুখে-স্বচ্ছন্দে কাল কাটাবে। ‘সাইবেরিয়ায় জীবস্তে কবর’ নামক পুস্তকে ডষ্টয়েভস্কি র্তার কার-কাহিনী লিপিবদ্ধ করেছেন। রুশ-গভর্ণমেণ্টের পৈশাচিক অত্যাচার-বিবরণ যদি কারো জানবার কৌতুঙ্গল থাকে, তবে তিনি যেন এই বইখানা পড়ে দেখেন। এভ রিম্যান্‌স লাইব্রেরী পর্য্যায়ে অধিকাংশ রুশ-লেখকদের বইয়েরই ইংরেজী অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ‘দোষ ও দণ্ড' নামক পুস্তকে সাইবেরিয়ার অত্যাচারের কথা উপন্যাস-আকারে লিখেছেন । যে বইখান লেখায় রুশিয়ার একপ্রান্ত হ’তে অপর প্রান্ত পৰ্য্যন্ত র্তার যশ ছড়িয়ে পড়েছিল, সেখানার নাম হচ্ছে ইডিট’ বা বোকা'। ডক্টয়েভস্কির লেখায় যদিও টুর্গোনভের ভাষার পারিপাট্য, টলষ্টয়ের সরল সোজাভাবে অতি অল্প কথায় বক্তব্য-প্রকাশ, পুশকিনের হাস্য-রসোদীপক বাছা-বাছা শব্দ-বিন্যাস—এ-সব কিছুই নেই,তথাপি তার রচনার ছত্ৰে-ছত্রে এমন একটা মধুর করুণ বিষাদের ভাব নিহিত রয়েছে যে, তাই পড়ে’ আজ—সমস্ত পৃথিবীর সাহিত্যুরসিক চকিত বিস্মিত এবং মুগ্ধ ৷ ১৮৮১ খৃষ্টাব্দে ডক্টয়েভস্কির মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পরেও তিনি স্বজাতির কাছে যে সম্মান পেয়েছিলেন, বোধ হয় এপর্যন্ত কোন দেশের কোন লব্ধপ্রতিষ্ঠ সাহিত্যিকই ততখানি সন্মান অর্জন করতে পারেননি। মৃত্যুর পর রুশিয়ার প্রত্যেক প্রদেশ থেকে অসংখ্য নর-নারী তার শবামুগমন করতে এসেছিল। জন-সংখ্যা এতই বেশী হয়েছিল যে,ক্লশ-গভর্ণমেণ্ট, সমাধি-ক্ষেত্র থেকে আরম্ভ করে’ রুশ-সাহিত্য ዓ®® সারা সহরময় কলাক-সৈন্ত সমাবেশ করে’ শান্তিরক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন । মৃত্যুর এক সপ্তাহ পরে তার দেহ সমাহিত করা হয় । টুর্গেনিভ এবং ডষ্টয়েভস্কি ইউরোপের শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিকদের মধ্যে গণ্য হ’লেও জগতের লোকে সব-চেয়ে বেশী চেনে কাউন্ট লিও টলষ্টয়কে। টলষ্টয় জনহিতকর বহু বিষয়ে বই লিখেছেন। উপন্যাসের ভিতর দিয়ে ধৰ্ম্ম রাজনীতি অর্থনীতি সমাজতত্ত্ব প্রভৃতি জটিল বিষয়ের সরল ভাষায় এমন সুন্দর মীমাংসা করে লোকের সামনে ধরেছেন, যেসে-সব বই যে পড়েছে সেইই মুগ্ধ হয়ে র্তার শিষ্যত্ব স্বীকার না করে’ পারেনি। একজন বিখ্যাত ইংরেজ লেখক তার সম্বন্ধে লিখেছেন—"Tolstoy is the landmark in the world of literature” —টলষ্টয় সাহিত্য-জগতের এক দর্শনীয় সামগ্রী ; কথাটা খুবই সত্যি। শুধু রুশিয়া কেন, সমগ্র পৃথিবীর মধ্যেও আজকাল টলষ্টয়ের সমকক্ষ লোক মেলা বোধ হয় কঠিন। তিনি যত বই লিখেছেন তার মধ্যে শাস্তি ও সংগ্রাম’ এবং ‘আনা-কারেনিন’ হচ্ছে সৰ্ব্ববাদীসম্মতিক্রমে র্তার শ্রেষ্ঠ রচনা। টলষ্টয় ছিলেন খাটি রুশ । রুশ-চরিত্রের সঙ্কীর্ণত একগুয়েমি প্রভৃতি দোষগুলি যেমন র্তার মধ্যে পূর্ণ মাত্রায় বিদ্যমান ছিল, আবার রুশের সদাশয়তা, ত্যাগস্বীকার আতিথেয়তা দয়া-দাক্ষিণ্যাদি সদগুণগুলিও তেমনি তার মধ্যে ছিল । তিনি অসাধারণ প্রতিভাসম্পন্ন লেখক ছিলেন। রচনা যে বিষয়েরই হোক না কেন,তাকে স্বম্পষ্ট সহজ ও উচ্চ সাহিত্যের গুণসম্পন্ন করে তোলবার ক্ষমতা তার ছিল। বক্তব্য সরস করে বল বার প্রয়োজন থাকূলে তিনি তা সরস করেই বলতেন, মৰ্ম্মস্পর্শী করার প্রয়োজন দু’লে তাই কবৃতেন। শাস্তি ও সংগ্রাম রচনাকালেই তার সাহিত্যিক শক্তি সৰ্ব্বাপেক্ষ জোরালো হয়েছিল। এই মহাকাহিনীটির দ্বারা বিচার করলে তাকে জগতের একজন শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক বলা যায়। র্তার অন্যান্য রচনা ও তার ব্যক্তিত্ত্বের প্রকাশ মানুষকে ক্ষু করে। সাইমন পোলোটোন্ধী যে ত্রত আরম্ভ করেছিলেন, কাউণ্ট, টলষ্টয় তার উদযাপন করেছেন। আজ রুশ