পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারতীয় সাহিত্যে ভারতীয় সমাজের ছায়া ঐঅনুরূপ দেবী এই ভারতবর্ষে অতি প্রাচীন কাল হইতে বিদ্যা এবং জ্ঞানের চর্চা ছিল। কি বৈদিক যুগে, কি বৌদ্ধযুগে, কি পৌরাণিক যুগে, এমন কি বৈদেশিক আক্রমণের যুগেও সে চর্চা কোনদিনই একেবারে বন্ধ হইয়া যায় নাই। বৈদিক যুগে এবং তংপরবর্তী যুগ-সকলে বেদ সঙ্কলিত, উপনিষদসমূহ প্রচারিত, এবং অষ্টাদশপুরাণ, রামায়ণ, মহাভারত, ষড়দর্শন অর্থাং ন্যায়, বৈশেষিক, মীমাংস, সাংখ্য, যোগ ও বেদান্ত, বৌদ্ধদর্শনসকল, ব্যাকরণ, জ্যোতিষ, গণিত এবং শ্ৰীমদভগবদ গীত ও ধৰ্ম্মশাস্ত্র, নীতিশাস্ত্র, তন্থশাস্ত্র, ও বহু কাব্য মহাকাব্য নাটক ও নাটিকার উৎপত্তি । বৈদিক পুরোহিত যখন “স্বৰ্গকাম যজেতঃ” এই উপদেশ প্রদানে সংসারীর মায়ামোহ পাশবদ্ধ অলস চিত্তকে অহরহ: ইহলৌকিক আনন্দবিলাস হইতে কথঞ্চিৎ সংযত, সাগ্রহ এবং উৰ্দ্ধলোকাশয়ী করিতে সচেষ্ট ছিলেন, তখন আর একদিকে কাণ্ডত্রয়াত্মক বেদের কৰ্ম্মকাণ্ডের বৈপরীত্যে জ্ঞানকাণ্ডের প্রচার অধিকারীভেদে যোগ্যপাত্রে প্রচলিত হইয়া গিয়াছিল। কোথাও যাগযজ্ঞ ক্রিয়াবহুল কৰ্ম্মকাণ্ডের, কোথাও ধ্যানযোগাশ্রিত এবং সমাধিজ্ঞানগম্যবিজ্ঞানবহুল জ্ঞানকাণ্ডের প্রচলন একই সঙ্গে জাহ্নবী-যমুনা ধারার মতই ভারতের পুণ্যবক্ষে প্রবাহিত হইতেছিল। ভারতের নবীন সাহিত্য তপোবনের তরুচ্ছায়ায় প্রবদ্ধিত হইয় উঠতেছিল। হিসাম্বেষবিবর্জিত শান্তরসাম্পদ বনভূমিতে সহস্ৰ সহস্র শিষ্যপরিবৃত তপ:স্বাধ্যায়নিরত জীবন্মুক্ত মহামুনি তাহার নিগুঢ় সাধনালন্ধ নিবৃঢ়ি আত্মানন্দে বিভোরচিত্তে বলিয়া উঠতেছিলেন,— “বেদাহমেত পুরুষং মহান্তমূ আদিত্যবর্ণ তমস্পরস্তাং ।” যে মহত্তত্বকে মহাজনেরা গুহানিহিত বলিয়াছেন, সেই গহনঙহার যাত্রাপথকে দুর্গমপখন্তং বলিয়া সাবধান করিতে পরাম্মুখ হন নাই—সে এই তত্ত্ব। আর সেই গভীর গুগনিহিত নিগুঢ় তত্ত্ববাৰ্ত্তাকে প্রাচীন ভারতের ঋষিগণ তাহাদের স্বগভীর ধানযোগে এবং মুকঠিন জ্ঞানযোগে আয়ত্ত করিয়া শুধু আত্মগত করেন নাই, তাহদের গভীরতর মানবপ্রেমের মুমহং নিদর্শনস্বরূপে তাহ মানবজীবনের চরমোংকৰ সাধনোদ্দেশ্বে ভারতীয় সাহিত্যে প্রদান করিয়া বলিয়াছেন।-- “যস্তদবেদ সবেদসৰ্ব্বমূ" । সেই তত্ত্ব এমনই যে, যে তাহ জানিয়াছে সে সব কিছুই পরিজ্ঞাত হইয়া গিয়াছে। সেই অচিন্তাকে অব্যক্তকে অপরিজ্ঞাতকে জ্ঞানগম্য করিয়া লইয়। সৰ্ব্বজনকল্যাণকামী ভারতীয় ঋষি গভীরচ্ছন্দে বলিয়াছেন‘বেদাহমেতম্!” আমি জানিয়াছি । কাহাকে ? “পুরুষং মহান্তম ।” তিনি কিরূপ ? “আদিত্যবর্ণং তমস: পরস্তাখ” । এই পুরুষ অবিদ্যাতিমিরের পরপারস্থ ব্ৰহ্মধামে জ্যোতিৰ্ম্ময় ব্ৰহ্মরূপে অবস্থিত ইহা আমি জানি। তাহাকে জানিলে কি হয় ? “তমেব বিদিত্বাতিমৃত্যুমেতি নান্ত:পস্থাঃ বিদ্যতে হয়নায়।" র্তাহাকে জানিলে জীব মহামৃত্যু হইতে মুক্তিলাভ করিতে পারে। ইহা ব্যতীত পরম পদলাভ করার আর দ্বিতীৰ উপায় নাই। এই স্নিগ্ধ স্থির জ্যোতি আমাদের প্রাচীন সাহিত্যকে আলোকিত করিতে থাকিয় জগতের তমোহস্তারূপে তাহাকে বিশ্বসাহিত্যে গৌরবাসন প্রদান করিয়া রাখিয়াছে। শুধু তত্ত্বের দিক দিয়া নহে, ভাষা ও ছন্দের দিক দিয়াও সৰ্ব্বাঙ্গীনভাবেই এক একটি উপনিষদ যেন এক একটি অমূল্য রত্নমঞ্জুষা। তারপর দেখা দিল পুরাণের যুগ। সাল তারিখ লইয়া বিচার করিতে গেলে ইহাদের রচনাকাল সম্বন্ধে বিস্তর মতভেদ দেখা দিবে। সমস্ত উপনিষদ একই সময়ে লিখিত হয় নাই। পুরাণসমূহও একই সময়ে অথবা ধারাবাহিকভাবে লিখিত বা সংগৃহীত হয় নাই। আমরা সাধারণভাবে শুধু একটা কালের বিভাগ করিয়া লইয়া সাহিত্যের কথাই