পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

e8३ ং প্রবাসনা ; ఏO8O বলিব । বাংলায় একটি প্রচলিত কথা আছে—“যাহা নাই ভারতে ( মহাভারতে ), তাহা নাই ভারতে।” আমাদের মহাভারতথানি জ্ঞানের একটি মূৰ্ত্ত প্রতীক। বস্তুত, যদি অবহিতচিত্তে সমগ্র মহাভারতখানি পাঠ করিতে পারা যায় তবে দেখা যাইবে যে ভীষ্মনীতি, শ্ৰীমদ্ভগবদগীত, যুধিষ্ঠির ও বকরূপী ধৰ্ম্মসংবাদসমেত সমস্ত মহাভারতে যাহা আছে তাহ। অতুলনীয়। গীতার মধ্যে সমস্ত বেদ বেদান্ত এবং যড়দর্শনের সার সংগৃহীত । ভারতীয় ঋষিগণের রচনার অনন্যসাধারণ বৈশিষ্ট্য যেমন পুলকিত করে তেমনি বিস্মিত করে। এত বড় বড় কঠিন বিষয়সমূহকে এমন সুললিত শ্রতিমুখকর সহজউচ্চায্য শব্দমালায় বিভূষিত এবং শ্লোকচ্ছন্দে গ্রন্থন করা যেন ভগবতী ভারতীর সাক্ষাৎ বরপুত্র ব্যতীত অন্তের দ্বারা সম্ভবপর মনে হয় না। অথবা স্বয়ং বাণীর হাতের বীণারই যেন এ সব কলঝঙ্কার ! যে মহত্তম চিত্রাবলী রামায়ণ মহাকাব্যে প্রদর্শিত হুইয়াছে, মনে হয় যে-কোন দেশে এমন একখানি মাত্র মহাকাব্যের উদ্ভব হইলে সে-দেশের সাহিত্যসাধনা সফল বিবেচিত হইতে পারে। ইহা যুগযুগাস্তরেও অমরত্বলাভের অধিকারী। ইহা একখানি চরিত্রপঞ্জিকা। সতীর আদর্শ, সতী পতির আদর্শ, সৌভ্রাত্রের আদর্শ, শক্তিমত্তার আদর্শ এবং সৰ্ব্বোপরি রাজার আদর্শ ইহাতে সহস্রদল পদ্মের মতই প্রস্ফুটিত হইয়া উঠিয়াছে। ইহার প্রত্যেক দলটিই যেন আর একটির মতই নেত্রশোভাকর, স্বগন্ধে ভরপুর। বস্তুত, সত্যাঙ্গুসন্ধান করিয়া দেখিলে স্বীকার করা অনিবাৰ্য্য যে, আমাদের দেশে কি জীবনে, কি সাহিত্যে রামায়ণকে এখনও পৰ্যন্ত কেহই সম্পূর্ণরূপে অতিক্রম করিয়া যাইতে সমর্থ হয় নাই। আজও বাংলা-সাহিত্যের তেজস্বিনী সতীচিত্রে সতীকুলরাণী সীতাদেবীর ছায়াপাত অলক্ষ্যেই হইয়া থাকে ; সৌভাত্রের তুলন। আজিও সেই লক্ষ্মণে, কুমন্ত্রণাম কুঁজি এবং বিমাতার বিসদৃশ ব্যবহারে কৈকেয়ী আজিও দৃষ্টান্তস্থল হইয়া আছেন। আজ শুধু নাই সেই সকল আদর্শের প্রধান আদর্শ রাজাধিরাজ শ্রীরামচন্দ্র । কেহ কেহ বলিয়া থাকেন, রামায়ণ ইতিহাস নহে, উল্লাহ একটি মহাকাব্য মাত্র ; রামায়ণের বর্ণিত চরিত্রসমূহ বাস্তবজগতের প্রাণী নহেন, কবির কল্পনার মধ্যেই উহাদের জন্মকৰ্ম্ম । কিন্তু এত বড় উচ্চ আদর্শ, এমন পরিপূর্ণ সমাজের চিত্র, কবি পান কোথায় ? কল্পনা করেন কেমন করিয়া ? কল্পনা কি কখন সম্পূর্ণ মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত হইতে পারে ? “ইহৈব নরকস্বর্গ,” ইহাই সাহিত্যে পরম সত্য। তথনকার আধ্যসমাজে সত্যসন্ধ 7 যিনি প্রাণ দিয়াও স্বমুখোচ্চারিত একটি বাণী রক্ষা করেন সত্যবাদী যুধিষ্ঠির যিনি জীবনের সর্বাপেক্ষা কঠিন সমস্তার মধ্যে নিপতিত হইয়াও সত্য পরিহার করেন নাই, সতীশ্রেষ্ঠা সাবিত্ৰী যিনি অত্যন্ত্রমাত্রজীবী জানিয়াও পতিভাবে দৃষ্ট অরণ্যবাদী দরিদ্রকে বরণ করিতে কুষ্ঠিত নহেন, এমনই সব উচ্চ আদর্শের সহিত ঘনিষ্ঠ পরিচয়ে পরিচিত না হইলে কবি কি কখনও তার কাব্যগ্রন্থে অমন মনিপুণভাবে তাহদের চিত্রগুলি আঁকিয়া তুলিতে পারিতেন ঃ- যে চিত্রাবলী সহস্ৰ সহস্র বর্ষের ঝঞ্চাময় সমাজধৰ্ম্ম রাষ্ট্রপরিবর্তনের মধ্যেও আজ পর্য্যস্ত স্নানায়মান হয় নাই হইতে জানে না, হইতে পারে না। যদি রামায়ণের মূলে ঐতিহাসিক সত্য না-ই থাকে, তবে সে কবি আরও কত বড় ; আরও কতখানি ভূয়োদর্শন এবং স্বক্ষদৃষ্টিযুক্ত, কি অপূৰ্ব্ব ঐন্দ্রজালিক শক্তিসম্পন্নই না তাহার লেখনী ! শিল্প ও সাহিত্য সকল দেশেরই জাতীয় ইতিহাস। ইতিহাসের মধ্য দিয়া যে ঐতিহাসিক বৃত্তান্ত পাওয়া যায়, শিল্প এবং সাহিত্যের মধ্য দিয়া তাহার সর্বাঙ্গীন পূর্ণ রূপটি নিখুঁতভাইে ফুটিয় উঠে । এদেশের ধারাবাহিক লিখিত ইতিহাস না মিলিলেও শিল্প এবং সাহিত্যের ভিতর দিয়া তাহার উখান ও পতনের উন্নতি অবনতির, বেশ একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ধারাবাহিকতা খুঁজিম্বা পাওয়া যায়। যখন বহিদৃষ্টি অপেক্ষা অস্তদৃষ্টি ভারতে প্রবল ছিল তখন ভাস্কর্য্যের মধ্য দিয়া তাহার ধ্যানের প্রতিমায় ধ্যানীযোগীর নাসাগ্রবন্ধ দৃষ্টি সৌম্যশান্ত সমাধিমগ্রভাবটি অতি সুন্দরব্রুপে ফুটিয়া উঠিয়াছিল। যখন হইতে ভারত যোগভ্ৰষ্ট হইল, তাহার সেই দুর্দশার পরিচম মুস্পষ্ট হইয়া উঠিতে লাগিল তাঙ্কার শিল্পে, তাহার সাহিত্যে । ক্রমশঃই বাহাড়ম্বর বাড়িতে লাগিল, ধ্যানদৃষ্টি ফুরাইয় গেল। বৌদ্ধযুগ ভারতেতিহাসে উন্নতির মহাযুগ। বস্তুত, এ সময়ে ভারতে শিল্পোন্নতির যে চরমোৎকর্ষ সাধিত হইয়াছিল তাহা ইতিহাসজ্ঞ পাঠকমাত্রেই অবগত আছেন। অজণ্টা, বোধগম, সাচি এবং সারনাথের ধ্বংসাবশেষ