পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

80.8 সেবাও তুমি করতে দাও না...কাছে এলেই তুমি দূরে সরে যাও...কতখানি আমার দুঃগ ? নীল কহিল, “আমি কি কিছু বলেচি তোমাকে ?’ ‘বলনি কিন্তু ভঙ্গীতে জানিয়েচ । তোমার সেবার অধিকার যে পেল না সে নিতান্ত দুর্ভাগ্য ! মিষ্টার মুখার্জি একটু থামিলেন, প্লেটটা সুমুখের টেবলের উপর নামাষ্টয় রাখিলেন, তারপর পুনরায় কহিলেন, "এ বেল। এই শাড়ীটা পরেচ ? কিন্তু গাড়া থেকে নামবার সময় সেই ম্যাডরাসি পারপল শাড়ীট। পরে নিও, কেন ? সেখান পরলে মনে হয় তুমি যেন এন্‌জেল, নেমে এসেচ স্বৰ্গ থেকে । বাস্তবিক, তোমার দিকে যখন লোকের। তাকায় তখন আমার রাগ হয় বটে. কিন্তু খুশীও হই । সকলের ঈর্ষার উপর দিয়ে সৌভাগ্যের রথ ছুটিয়ে দিতে আমার খুব ভাল লাগে।’ গম্ গম্‌ করিয়া ট্রেন ছুটিতেছে। মিষ্ট্রার মুপার্জি একটু থামিলেন, তারপর পুনরায় স্থর করিলেন সেই চিরস্থন বিষয়বস্তুটির পুনরাবৃত্তি। স্ত্রীর জন্য র্তাহার উদ্বেগ-আকুলতার সীমা নাই, কোথায় কোথায় প্রসাধন-সামগ্রীর জন্য অর্ডার পাঠাইয়াছেন, কতগুলি ডাক্তারের সহিত তিনি স্ত্রীর স্বাস্থ্যরক্ষা সম্বন্ধে আলোচনা করিয়াছেন, এবারের গ্রীষ্মে দাৰ্জিলিং কিংবা মুসৌরী কোনটা নীলার বর্তমান স্বাস্থ্যের পক্ষে অমুকুল, ইত্যাদি । নীল চপ করিয়া শুনিয়া যাইতেছিল, তিন বৎসরকাল এমনি নীরবেষ্ট সে গুনিয়া আসিতেছে । ইহার ঠিক পরেই স্বরু হইবে তাহার রূপ সম্বন্ধে স্তুতিবাক্য। সে দেখিতে সুন্দর. সে এনজেল, তাহার কণ্ঠে সঙ্গীত, তাহার সৰ্ব্বাঙ্গে বসন্তকালের ঐশ্বধাসম্ভার। প্রতিদিন সে না-কি তাহার মোহগ্ৰস্ত স্বামীর চক্ষে নব নব রূপে মূৰ্ত্তিমতী হুইয়া উঠে, নব নব রসে,-– নব নব অল্পপ্রেরণায় । বারে বারে পরিচ্ছদ পরিবর্তন করিলে স্বামী আনন্দিত হন নিত্যনূতন সাজসজ্জায় প্রকৃতি যেমন আপন বৈচিত্র্যকে প্রকাশ করে, যেমন বর্ষার পরে শরৎ, শীতের পর বসন্ত । নিরস্তুর প্রশংসা ও খ্যাতি মানুষকে অবসাদগ্ৰস্ত করিয়া তুলে, ক্লাস্তি আনিয় দেয়। নীলার চক্ষে তঞ্জ নামিয়া আসিল । মিষ্টার মুখাজি তাহার মাথার কাছে বসিয়া তাহার চুলের ভিতরে ধীরে ধীরে আঙল চালাইতে লাগিলেন। । মেদিনীপুরের একটা সাবডিভিশনের ষ্টেশনে গাড়ী SOBO আসিয়া দাড়াইতেই নীলার তন্দ্র ভাঙিল। প্লাটফরমে কয়েক জন ভদ্রলোক তাহদের অভ্যর্থনা করিয়া নামাইতে আসিয়া দাড়াইয়াছেন। সাবপোষ্টমাষ্টার ও ইনস্পেক্টর বাবু হাসিয়া মিষ্টার মুখাঞ্জিকে নমস্কার করিলেন। দুষ্ট একজন কেরানী উভয়কে নমস্কার করিয়া সরিয়া দাড়াইল । গাড়ী বেশীক্ষণ থাকিবে না. আরদালি আসিয়া জিনিষপত্র নামাইয়৷ লষ্টল। ষ্টেশনে গাড়ীর ব্যবস্থার প্রয়োজন হয় নাই, নিকটেই সরকারি বাংলো । মাষ্টারবাবু কহিলেন, সব ব্যবস্থা আছে, থাকার কোনো কষ্ট হবে না, আমরা রান্নাবান্নার ব্যবস্থা ক’রে রেখেচি P ইনস্পেক্টর কহিলেন, “যদি অনুবিধে না হয় তবে দিন-দুষ্ট থেকে যাবেন ।” মিষ্টার মুখার্জি কহিলেন, “থাকা আর চলবে না, এর শরীর ভাল নেই। আপনাদের রেকর্ডগুলে| আজকেই আমাকে দেখে শুনে নিতে হবে. কাল সকালের গাড়ীতেষ্ট ফিরে যাব । বেলা দেখছি আর বাকি নেই । হরিপদ যে, কি খবর ? একটি লোক অদূরে তাহদের সঙ্গে সঙ্গে চলিতেছিল, এইবার সবিনয়ে হেঁট হইয়া নমস্কার করিল। বলিল, “আমাদের সৌভাগ্য যে আপনারা এলেন ' ‘কাজকন্ম কেমন করচ ? মাষ্টারবাবু বলিলেন, কাজকৰ্ম্ম ত ভালষ্ট করে, তবে স্ত্রীকে নিয়েই ওর বিপদ...ছুটোছুটি করে হায়রাণ হয়।’ মুখার্জি কহিলেন, ‘স্ত্রী এখন কেমন ? হরিপদ কহিল, সেই একই রকম।” ‘তুমি ছুটি চেয়েছিলে, কিন্তু মঞ্জুর করতে পারিনি। ছুটি আর তোমার পাওনা নেই হরিপদ । হরিপদ মাথা হেঁট করিম চলিতে লাগিল । বাংলোর বারান্দার কাছে আসিয়া সকলে বিদায় লইল । মাষ্টারবাবু প্রভৃতি সবাই রেকর্ড গুছাইতে তাড়াতাড়ি ডাকঘরের দিকে চলিয়া গেলেন। স্বামি-স্ত্রী বাংলোর ভিতরে প্রবেশ করিল। সম্মুখে বিস্তৃত ঘাসের জমি ; তাহাকেই বেষ্টন করিয়া রাঙামাটির চক্রাকার পথ ঘুরিয়৷ ষ্টেশনের দিকে চলিয়া গেছে। উত্তর দিকে কয়েকটি সরকারী দপ্তর, পাশেই পুলিসের থান, আদালত, মহকুমা হাকিমের বাস- তাহারই