পাতা:প্রবাসী (দ্বাবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] সত্য বটে, বিজ্ঞানের শক্লিতে বলীয়ান হইয়া মানুষ পরম্পরের ধংসের জন্য নানাবিধ নৃতন নূতন শক্তিশালী উপায় উদ্ভাবন করিতেছে। গত ইউরোপীয় মহাসমরে বিমান-পোত (উড়ো-জাহাজ) ও বিষাক্ত বায়ু প্রভৃতির ব্যবহারেই ইহার বিশেষ পরিচয় পাওয়া যায় । সম্প্রতি আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রের রাসায়নিকগণ এই-সমস্ত বিষাক্ত বায়ু প্রভৃতির প্রস্তুত-প্রণালীর অঙ্গুসন্ধানের ফলে Lewsite (লিউসাইট) নামক এমন একটি বিষাক্ত বায়ুর আবিষ্কারকরিয়া.ছেন যে তাহা যদি উপর হইতে উড়ো-জাহাজের সাহায্যে নিম্নে পৃথিবীর লোকের উপর বর্ষণ করা হয় তাহা হইলে বড় বড় সহরগুলিকে তাহাদের যাবতীয় অধিবাসী সহ সম্পূর্ণ ধ্বংস করিয়া দেওয়া যাইতে পারে। ইহা ভাবিলে সকলেরই আতঙ্ক উপস্থিত হইবে সন্দেহ নাই। কিন্তু বিজ্ঞানের এই সংহার-শক্তিকে মানুষের ধ্বংসে নিযুক্ত না করিয়া বিশেষ হিতকর কাৰ্য্যে ব্যবহার করা যাইতে পারে। যেমন ডিনামাইটের সাহায্যে লোকধ্বংস নী * করিয়া পাহাড়-পৰ্ব্বত ইত্যাদি ভাঙ্গিয়া মানুষের গতিবিধির জন্য রাস্ত ও রেল-লাইন ইত্যাদি প্রস্তুত হইতেছে। ক্লোরোফর্ম্ নামক পদার্থটি ষেদনাহীন অস্ত্র-প্রয়োগের জন্য চিকিৎসা-কার্য্যে যে কিপ্রকার ব্যবহৃত হইতেছে তাহা কাহারও অবিদিত নহে। অনেকদিনের আগেকার কথা মনে পড়ে যখন আমাদেরই এই মেডিকেল কলেজে ইঙ্গিতমাত্রেই যমদূতের মত কয়জন ডোম, রোগীকে জোর-জবরদস্তি করিয়া চাপিয়া ধরিত এবং ডাক্তার র্তাহার শাণিত করাত দিয়া হাত কাটিয়া অঙ্গচ্ছেদ করিতেন, রোগী তখন অসহ যন্ত্রণায় আৰ্ত্তনাদ করিতে থাকিত । বর্তমানে ক্লোরোফমের কৃপায় যে কোন কঠোর ও নিদারুণ অস্ত্রচিকিৎসা বিনা কষ্টে ও সহজে সম্পাদিত হইতেছে। রোগী এমন অচৈতন্য হইয়া থাকে যে সে জানিতেও পারে না, যে, কখন তাহfর অঙ্গচ্ছেদ করা হইয়াছে। চোখের অস্ত্র-চিকিৎসায় ও দাত উৎপাটন ব্যাপারে “কোকেন" নামক জিনিষটিও সেইরূপ যুগান্তর অনিয়ন করিয়াছে এখানে আবুও কয়েকটি বিশেষ ভাবে পরীক্ষিত রোগের ঔষধ উল্লেখযোগ্য মনে করি। ইহাদের বৈজ্ঞানিক জগতে ভারতবাসীর স্থান নির্ণয় جلا«قي আবিষ্কারে মানবজাতির যে কি পরিমাণ কষ্টের লাঘব হইয়াছে ও মৃত্যুসংখ্যা হ্রাস হইয়াছে তাহা সকলেই অল্পবিস্তর অবগত আছেন । “স্তাল্ভাসন" নামক অব্যর্থ ঔষধটির বিষয় অনেকেই শুনিয়াছেন, ইহা injection বা সুচবিদ্ধ করিয়া শরীরের অভ্যন্তরে প্রয়োগ করান হয় ; ইহা যে কত দুঃখের দুৰ্ব্বহ জীবনকে শান্তিময় করিয়াছে তাহা সকলেই একবাক্যে স্বীকার করিবেন। ইহা ব্যতীত ম্যালেরিয়ায় কুইনাইন, ডিপথেরিয়ায় এন্টিডিপূথেরিকৃ সীরাম, আমাশয়ে এমেট ইত্যাদি আরও অনেক মহৌষধের নাম করা যাইতে পারে, যাহার আবিষ্কারে মানবজাতির প্রভূত কল্যাণ ও হিতসাধন হইয়াছে। বর্তমানযুগে অস্ত্রচিকিৎসার দ্রুত ও অদ্ভূত উন্নতিও বিজ্ঞানের কল্যাণশক্তির একটি প্রধান উদাহরণ। কত অন্ধ ব্যক্তি চোখের (কোটারাকৃঢ় অপারেশনের ) ছানি কাটাইবার পর পুনরায় কাৰ্য্যকরী দৃষ্টিশক্তি লাভ করিতেছে । তদুপরি বর্তমানে যে কারণেই হউক বালক যুবক ও বৃদ্ধ সবাই ক্ষীণদৃষ্টি হইয়া পড়িয়াছেন, চশমার অভাবে তাহাদের যে কি দুর্দশ ঘটিত তাহ সহজেই অনুমান করা যাইতে পারে । বোধ হয়, অন্তত: শতকরা ৩০জন শিক্ষিত ব্যক্তিকে লেখাপড়ায় ইস্তফা দিয়া গৃহে বগিয়া থাকিতে হইত ! অন্যদিকে এই বিজ্ঞানের চর্চাই আবার মানুষকে তাহার নানাবিধ সুখসম্ভোগের সামগ্রী জোগাইতেছে। কয়লা হইতে সঙ্কাত আলকাংরা নামক কাল দুৰ্গন্ধ পদার্থটি হইতে এমন-সমস্ত জিনিষ প্রস্তুত হইতেছে, যাহা দ্বার বিচিত্র বর্ণের রং, নানাবিধ মহৌষধ, ফুল ও ফলের কৃত্রিম গন্ধ ও বহুবিধ বিস্ফোরক পদার্থের সৃষ্টি হইতেছে। এইসমস্ত জিনিষ জগতের বাজারে বিজ্ঞানের, বিশেষতঃ রসায়নের বিজয়-বাৰ্ত্ত প্রচার করিতেছে । নানাবিধ বিষাক্ত জিনিষ চিকিৎসা-কাৰ্য্যে বিশেষ বিশেষ রোগের প্রধান ঔষধরূপে ব্যবহৃত হইতেছে। তবে মানুষ যখন স্ববুদ্ধি হারাইয়া ফেলে তখন ভাল জিনিষেরও প্রায় অপব্যবহার ঘটিয়া থাকে । আরও-একট বিষয় এখানে বলা আবখ্যক মনে করি। অনেক বিবেচক পণ্ডিতের মনে করেন যে