পাতা:প্রবাসী (দ্বাবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যl ] চলিয়া গেল ; মাধবীকে ছবি আঁকা শিখাইতেছে, জানুলা বা দরজার আড়াল দিয়া তাহার দুষ্টুমিভরা চাউনি সহসা জলিয়া উঠিল, কখনও বা ঘরে ঢুকিয়া মাধবীর ঘাড়ে ঝুঁকিয়া ছবি সম্বন্ধে অফুরন্ত মন্তব্য অনর্গল বকিছু কোন কথা না শুনিয়া চলিয়া গেল। লাইব্রেরীতে ব্লজত ছবি দেখিতেছে, সেও একখানি ছবিব বই টানিয়া লইয়। কোন স্বত্র ধরিয়া কয়েকমিনিট গল্প করিয়া চলিয়া গেল । তাহার সহিত যে কিরূপে মেশা যায় তাহা রজতের সমস্তার ব্যাপার হইয়া দাড়াইল । তাহার সহিত বেড়াইতে যাইবার সুবিধা বা এক থাকিবার স্বযোগ সে দিত না, দিতে কেমন ভয় করিত। * এখানে আসিয়া রজত খুব ভোরে উঠিত। তাহার ঘরের সম্মুখেই দিগন্তভর প্রান্তর, তাহার একদিকে পাহাড়, আর-একদিকে শালবন ; এই উন্মুক্ত পাৰ্ব্বত্যদেশে শিশির-ঝলমল উষায় অরুণোদয়ের শোভা তাহাকে প্রথম দিনেই মুগ্ধ করিয়াছিল। সেদিন ভোরে উঠিয়া লালরংএব আলোয়ামটা গায়ে দিয়া সামনের মাঠে সে বেড়াইতেছিল, তখন স্বৰ্য্য ওঠে নাই, কয়েকটি তারা পশ্চিমদিকের পাহাড়ের মাথায় জলিতেছে, রাত্রিশেষের শিশিরাত্র অন্ধকার স্নিগ্ধ আবরণের মত চারিদিকে ছড়াইয় । চারিদিক স্তন্ধ ; একটা কিসের শবো পিছনে মুখ ফিরাইয়া রজত দেগিল, দোতোলার ঘরে জান্‌লা খুলিয়া মাধবী দাড়াইয়া হিয়াছে, সেই আলোছায়ায় তাহাকে মূৰ্ত্তিমতী উষার মত দেখাইতেছিল। ক্ষণিকের জন্ত তাহার দিকে চাহিয়া ধৃদ্ধ হালিয়। রজত আবার পূর্বকাশের দিকে চাহিয়৷ রহিল। সেই উষার আলোয় স্তন্ধ স্নিগ্ধ উদার প্রান্তরের মধ্যে রুজতের দীর্ঘ রঙীন দেহ, তাহার বিপৰ্য্যস্ত কালো কেশ, দীপ্ত চাউনি মাধবীর সদ্যজাগরণফুল্ল অস্তরে কি নেশার অকণিমা ধরাইয়৷ দিল ; তাহার বিজন যৌবন-পথ এই প্রথম পুরুষের পায়ের স্পর্শে যেন উষার আকাশের মত কঁাপিতেছে ; ওই প্রান্তরের মত তাহার জীবন রিক্ত, উদাস, স্তষ্ক, শুভ্ৰকুয়াসায় ভরা পড়িয়ারহিয়াছে ;-প্রেমারণের অভু্যদর্ঘের সঙ্গে সঙ্গে রাঙা রমলা రి&సె _ و هو تهیه ی "ه"مه আলোময় পুষ্পেভরা গীতমুখর হইয়া উঠিবে।" চৰিতপদে সে ঘরের দরজা খুলিয়া বাহির হইয়া গেল । পূরবীন্বরের মত কথাগুলি রজতের কানে বাজিয়া উঠিল,—আপনি এত সকালে উঠেছেন যে " মাধবীকে তাহার পাশে দেখিয়া একটু চমকিয়া উঠিয় রজত বলিল,—ভারি ভাল লাগে ভোরবেলাটা। মাধবীর সমস্ত দেহ বেলফুলের মত সাদা শালে জড়ানো, সদ্যজাগরণফুল্ল মুখখানি বিকচপদ্মের মত অকারণ আনন্দে রাঙা, বিপৰ্য্যস্ত মুক্ত বেণী সাদা শালের উপর দুলিতেছে, কয়েকটি অলক কপোলের উপর আসিয়া পড়িয়াছে ; দূর হইতে যাহাকে মূৰ্ত্তিমতী উষার মত বোধ হইয়াছিল, নিকটে সে নবরূপে প্রকাশিত হইল । মাধবী দীপ্তকণ্ঠে বলিল,—ভারি স্বন্দর ভোর বেলাট । রজত মুছ হাসিয়া বলিল,—ইl, ভারি স্বন্দর। মাধবী কোন অজানা আনন্দের আবেগে বলিল,— চলুন না, ওদিকে একটু বেড়িয়ে আসি । চলুন, বলিয়া রজত ধীরে তাহার পাশে পাশে চলিল । চারিদিক শান্ত, স্নিগ্ধ। এ পবিত্র স্তন্ধত ভাঙিয়া কথা বলিতে কেহই পারিল না, দুইজনেই নীরবে চলিল । প্রাস্তরের মধ্যে তিনখানি খুব বড় কালে পাথরের নিকট আসিয়া দুইজনে থামিল ; পাথরগুলি শিশিরে ভিজিয়া গিয়াছে, মনে হয় তাহীদের বুক হইতে জল ঝরিতেছে ; মাধবী একটা ছোট পাথরের উপর উঠিয়া দাড়াইল, রজত তাহার পাশে স্থির হইয়া দাড়াইল, দূরে পাহাড়ের সারির পাশ দিয়া স্বয উঠতেছে। পূজার মুহূৰ্ত্তের পূৰ্ব্বে পূজারী যেমন প্রতিমার দিকে চাহিয়া চুপ করিয়া দাড়ায় তেমি দুইজনে দাড়াইয়া রহিল। ধীরে ধীরে চক্রবাল রাঙা করিয়া স্বয্য উঠিতে লাগিল, ঘাসে ঘাসে পাথরে পাথরে শিশিরবিন্দু ঋকৃমক্‌ করিয়া উঠিল, পাহাড়ে পাহাড়ে শালবনের অন্ধকারে হাওয়া জাগিয়া মাতামাতি নুরু করিল। স্বৰ্ঘ্য যখন সম্পূর্ণ উঠিয়া দিনের যাত্র স্বরু করিল, মাধবী একবার দীপ্তনেত্রে রজতের দিকে চাহিল, রজত দেগিল তাহার স্থির শুভ্র নয়ন আজ কি স্বপ্লের রংএ রাঙিয়া উঠিয়াছে । .