পাতা:প্রবাসী (দ্বাবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রস্কারসমল বৈষ্ণব যুগে নারীর শক্তি বৈষ্ণবদিগের ভক্তমাল গ্রন্থখানির মধ্যে যে সত্য ও কল্পনা উভয়ই মিশ্রিত হইয়াছে, সে বিষয়ে কোনই সন্দেহ নাই । কিন্তু - তাহা হইলেও ঐ বইখানির ভিতর বৈষ্ণবযুগের সামাজিক ইতিহাসও একটু অবগত হ৭য়া যায় । তাহা ছাড়া আব-একটি কারণে উক্ত গ্রন্থখানি সকলের আলোচনীর যোগ্য । তন্মধ্যে কয়েকটি মনস্বিনী ও ধৰ্ম্মশীলা নারীর সাধনের, শাস্ত্রজ্ঞানের ও ভক্তির কাহিনী বণিত আছে। উহা পড়িয়া যথার্থই হৃদয় আনন্সে আপ্লুত হইয়া যায়। . আমরা এ দেশের প্রসিদ্ধ কয়েকখানি পুরাণে বিস্তর পতিব্রভ নারীর উল্লেখ দেখিতে পাই । তাহার স্বামীকেই জীবনসৰ্ব্বস্ব দেবতা মনে করিয়াছেন, তাহাদের জন্ত সৰ্ব্বপ্রকার দুঃখকষ্টকে হৃদয়ে বরণ করিয়া লইগছেন । কিন্তু বৌদ্ধযুগের ইতিহাস একটুকু পড়িলে দেখিতে পাওয়া যায়, বহু রমণী পুরুষের মতই স্থান লাভ করিয়াছেন, ধৰ্ম্মের জন্য মুখ স্বার্থ পায়ে ঠেলিয়াছেন, ভিক্ষুণী হইয়া কঠোর সাধন করিয়াছেন ; তাহার পরে ধৰ্ম্মপ্রচারের জন্য কেহ কেহ দূর বিদেশে সাগর পারেও চলিয়া গিয়াছেন। বৌদ্ধযুগের পরে, অপেক্ষাকৃত আধুনিক বৈষ্ণবদিগের গ্রন্থে—অর্থাং মীরাবাইর সময় হইতে বৈষ্ণব লেখকদিগের পুস্তকে কয়েকটি ভক্তিমতী ও তেজস্বিনী নারীর জীবনের কিছু নূতন রকমের কথা পাঠ করিয়া থাকি । তাহারা স্বামীকেও ভালবাসিয়াছেন, স্বামীর সেবাও করিয়াছেন । কিন্তু সত্যের জল্প, ধৰ্ম্মের জন্য, অন্তরস্থিত বিশ্বাসে অটল থাকিবার জন্য র্তাহারা স্বামীর কুসংস্কারপূর্ণ মতের বিরুদ্ধে চলিতে এবং অন্যায়, কায্যের প্রতিবার করিতে মোটেই ভয় পান নাই। এজন্য প্রথমে শ্বশুরকুলের লোকেরা র্তাহীদের উপরে অত্যন্ত বিরক্ত হইয়াছেন বটে ; কিন্তু তাহার পুরে ঐ-সকল সাধবী নারীদিগের মনের বল, অন্তরের পবিত্রত, আধ্যাত্মিক শক্তি ও ভগবানের প্রতি ভক্তি দেখিয়া, স্বামীরাও র্তাহীদের পদতলে মন্ত্বক নত করিতে কুষ্ঠিত হন নাই। আমি আজ ভক্তমাল গ্রন্থ অবলম্বন করিয়৷” উক্তরূপ দুইটি মনস্বিনী ও ভক্তিমতী নারীর জীবনের কাহিনী বর্ণনা করিতে চেষ্টা করিব। ( > ) দেবকীনন্দন রায় কাটোয়ার নবাবের ফৌজদার । তাহার বিস্তর টাকা । তিনি মস্ত বড় ধনী । ধৰ্ম্ম বলিলে ঠিক যাহা বুঝা যায়, এই ধনাঢ্য লোকটির ভিতরে তাহার কিছুই ছিল কি না তাহ বলা বড়ই মুস্কিল। কিন্তু তাহার ৬ণ্ডামি যে পূর্ণ মাত্রায়ই ছিল, সে কথা সকলেই জানিত । আপনাকে ধনী এবং ধাৰ্ম্মিক বলিয়া জাহির করিবার জন্য বাহিরে তাহার পূজার অfড়ম্বরই বা কত । ভক্তমাল-রচয়িতা বলিতেছেন— "যমুনীর তীরে ঘর নিকটে যমুনা। স্নানীদি করলে সদা সন্ধ্যাদি বন্দন ॥ হস্তী যে বৃহৎ এক বৃহৎ দশন । দশন উপরে করি চৌকির আসন ॥ জলে দাড় করাইয় তাহাতে বসিয়া । দেবীপূজা করে বড় বড়াই করিয়া ॥ রক্তচন্দনের ফোটা সৰ্ব্বঙ্গে লেপিয়া । সদা ভৈরবের প্রায় আকার হইয়া ॥ রক্তচন্দন জবা পুষ্প তাম্র শখে। পূঞ্জয়ে বসিয়৷ o এই জাকজমকওয়ালা ধনীর প্রথম পত্নীর মৃত্যুর পরে দ্বিতীয় বার তাহার বিবাহ হইল। এই বিবাহের স্ত্রী গৃহস্থ বৈষ্ণবের কন্যা। বিবাহের সময়ে তাহার কত বয়স হইয়াছিল, ভক্তমাল গ্রন্থে সে বিষয়ে কোন কথারই উল্লেখ দেখা যায় না। কিন্তু তিনি ৰে বুদ্ধিমতী, তেজস্বিনী ও ধৰ্ম্মশীলা তরুণী নারী ছিলেন, তাহার বয়স যে নিতান্ত অল্প ছিল না, সে কথা ঐ গ্রন্থের বর্ণনা পাঠ করিয়া অতি স্পষ্টরূপেই বুঝিতে পারা যায়। ভক্তমাল-রচয়িত বলিতেছেন, এই বৈষ্ণবের কন্যা ‘পিতৃগৃহে থাকিতেই